নৈশব্দ ঘেরা এক বৌদ্ধ বিহার
ইতিহাস , অধুনিকতা কিংবা
অভিনবত্ব সবকিছুর মিলমিশ এই আমাদের হুগলী জেলা .এই জেলার এমন কিছু উৎসব কিংবা
লোকাচার রয়েছে যা ভূভারতে কোথাও নেই . এই জেলা যেন সর্ব ধর্ম
এর মিলনক্ষেত্র । হিন্দু , মুসলিম , বৌদ্ধ , শিখ সব মিলেমিশে
একাকার । আবার এ জেলায় এমন কিছু সৌধ রয়েছে যা এ
রাজ্যে বিশেষ দেখা যায়না .
সে
হতে পারে প্রাচীন মন্দির কিনবা মসজিদ কিনবা গির্জা । উদাহরণ হিসাবে বাশবেড়িয়ার হংসেশবরী
কিনবা চুচড়ার মতিঝিল মসজিদ আবার শ্রীরামপুরের ওলাভ চার্চ । এই জেলা জুড়ে রয়েছে শয়ে শয়ে উদাহরণ
। আজ বলবো এমনই এক সৌধের কথা । এক বৌদ্ধ বিহারের কথা ।
এই জেলার পুরশুড়ার দেউল পাড়া অঞ্চলের সেই সৌধের কথা বলি
.. বয়সের দিক থেকে কিছুটা নবীন হলেও এই রাজ্যে এমন সৌধ বিশেষ নেই .. এই জেলায় এই
একটি আছে ..
হ্যাঁ দেউল পাড়ার বৌদ্ধ বিহারে কথা বলছি . যে মন্দিরের আনুষ্ঠানিক নাম শ্রী
শ্রী “ ত্রি রত্না সংঘ
শান্তিবিতান বৌদ্ধ বিহার “ । চব্বিশ তম দালাইলামা স্বয়ং এসেছেন এই
বৌদ্ধ বিহারে। এই
বৌদ্ধ বিহারের বয়স বছর ৩৫ ।
১৯৮৫
সালে এই বৌদ্ধ বিহার নির্মাণ করেন তারক চন্দ্র বাইরি মহাশয় । এই
পরিবারের যথেষ্ঠ খ্যাতী রয়েছে স্থানীয়
মানুষের কাছে । এই পরিবার নির্মিত রথ কিনবা স্কুল বাড়ি এই
অঞ্চলে দ্রষ্টব্য ।
দামোদারের পাড়ে নারকেল গাছ আর বাগান ঘেরা এই
বৌদ্ধ বিহারের নৈশব্দ ঘন পরিবেশ মনে এক অনাবিল শান্তি দেয় । ছায়াঘন
পরিবেশে মন এক অন্য শান্তির সন্ধান পায় ।
এই বৌদ্ধ বিহারের পরিবেশ প্রশান্তির এক অন্য
জগতের খোজ দেয় ।
চারিদিকের
সবুজ
, পাখীর ডাক এবং বৌদ্ধ মন্দিরের নিরবতা । সবমিলিয়ে
এক মনমুগ্ধ পরিবেশ ।
আলাপ হলো এই
বৌদ্ধ বিহারের কেয়ার টেকার শ্রী সুকুমার বেড়ার সাথে .. আমরা যখন দেউল পাড়া
পৌছেছিলাম তখন বৌদ্ধ বিহার বন্ধ হয়ে গেছে .. কিন্তু সুকুমার বাবু কে অনুরোধ করায়
উনি মন্দির খুলে দিলেন .. আমাদের নানা প্রশ্নের সব উত্তর ও দিলেন ..
বয়সে নবীন এই বিহারে সেই ভাবে ইতিহাস প্রসিদ্ধ
না হলেও
, এই বৌদ্ধ বিহার তার আপন মহিমায় মহিমান্বিত । বৌদ্ধ বিহারের ভিতরের দেওয়ালে রয়েছে বৌদ্ধের জীবনের নানা কাহিনী র ছবি । আর রয়েছে শ্বেত পাথরের শান্ত বৌদ্ধ মূর্তি । যা
বড়ই মন মুগদ্ধকর ।
পুড়শুড়ার দেউল পাড়ার এই বৌদ্ধ বিহার প্রত্যেক বৌদ্ধ পূর্ণিমা
য় উৎসবে মেতে ওঠে ।
স্থানীয়
মানুষ থেকে শুরু করে দূরান্তের মানুষ উৎসবে সামিল হন । দেউলপাড়া
পৌঁছেও যাওয়া যায় খুব সহজে রেল পথে তারকেশ্বর
ষ্টেশন এ নেমে বাসে দেউল পাড়া কিনবা সড়ক পথে চাপাডাঙ্গা হয়ে দামোদর ব্রিজ পেরিয়ে
পুড়শুরা মোড় থেকে ডানদিকে বাক নিয়ে (আরামবাগের দিক থেকে বামদিকে ) দামোদর নদী কে
ডান পাশে রেখে নদীর ধারের রাস্তা দিয়ে পৌঁছে জান দেউলপাড়া ।
নদী , ব্রিজ , বৌদ্ধ মন্দির সব
মিলিয়ে শহরের কোলাহল ছেড়ে দারুণ আউটিং । তবে
ভয় কিনবা খারাপ লাগা বলতে একটাই .. দামোদারের তীর বর্তী এই অঞ্চল প্রত্যেক বর্ষা
তেই বন্যার জলে ডুবে যায়
।সেই
সময় এই মন্দিরে ও জল ঢুকে যায় ।
< ছবি ও তথ্য - সুমন্ত বড়াল >
No comments:
Post a Comment