Monday, 4 November 2019


  রাজবাড়ির ঠাকুর দালান থেকে সাধারণ মানুষের অঙ্গনে প্রথম পুজোর গল্প
                              
                        প্রথম বারোয়ারী পুজোর গল্প  




হুগলী জেলার এক প্রসিদ্ধ জনপদ গুপ্তিপাড়া। মুকুন্দ রাম চক্রবর্তী র চন্ডীমঙ্গল কাব্যে এই জনপদের উল্লেখ পাওয়া যায়।
এই গুপ্তিপাড়া প্রসিদ্ধ তার রথ উৎসব কে কেন্দ্র করে।
তবে এই গুপ্তিপাড়া,  ইতিহাস কিংবা বলা যেতে পারে সমগ্র বাংলার ইতিহাসে এই জনপদ এর নাম স্বর্ণাক্ষরে লিখে রেখেছেন এই জনপদের ১২ জন ব্রাহ্মণ । ১২ জন বন্ধু অর্থাৎ বারো ইয়ার। আজ সারা বঙ্গে বারোযারী পুজোর রমরমা নানা শিল্প সুষমায় সেজে সে পুজো আজ বিশ্ব ব্যাপী। কিন্তু আজ থেকে ২৬০ বছর আগে এই গুপ্তিপাড়া ১২ জন ব্রাহ্মণ যুবক মিলে প্রথম রাজবাড়ীর ঠাকুর দালান থেকে সাধারণ মানুষের মধ্যে নিয়ে এলো উৎসব কে। উৎসব তো সকলের রাজা বা জমিদারের আঙিনায় তা বন্দী থাকবে কেন? আজ থেকে ২৬০ বছর আগে যেন এক বিপ্লব ঘটিয়েছিলেন এই বারো ইয়ার।
কথিত আছে গুপ্তিপাড়া অঞ্চলের কিছু মহিলা স্থানীয় জমিদার বাড়িতে দূর্গাপুজা দেখতে গিয়ে অপমানিত হন, বাড়ি ফিরে তারা সে কথা জানালে সেই বাড়ির ছেলেরা নিজেদের উদ্যোগে পুজো করার সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু দুর্গাপূজা তো তখন হয়ে গেছে তাই কার্ত্তিক মাসের শুক্ল নবমী  তারা পূজা আয়োজন করে।




শুরু হয় অবিভক্ত বাঙলার প্রথম যৌথ উদ্যোগে পুজো যা রাজবাড়ির আঙিনায় নয় বরং সাধারণ এর উঠানে যার লৌকিক নাম বারোয়ারী পুজা।
দেবীর নাম হয় বিন্ধ্য বাসিনী। সেই থেকে আজও গুপ্তিপাড়ার বিন্ধ্যবাসিনী তলা তে সাড়ম্বরে পালিত হয় এই পুজো ।
তৎকালীন বিভিন্ন পত্রিকায় এই ঘটনার উল্লেখ করা হয়।
সেই সময় স্থানীয় ব্রাহ্মণ রা  বারোজন কে নির্বাচিত করে একটি কমিটি গঠন করেন ।যারা বাংলার সম্ভ্রান্ত পরিবারের কাছ থেকে সেই সময় ৭০০০ হাজার টাকা চাঁদা সংগ্রহ করে।
এই বিষয়ে শ্রীরামপুর থেকে প্রকাশিত "ফ্রেন্ডস অব ইন্ডিয়া " পত্রিকায় ১৮২০ সালে একটি খবর প্রকাশিত হয়। যাতে লেখা হয়।
"  A new species of puja which has been introduced into Bengal within the last thirty years called barowaree, About thirty year's ago at Guptipara near Santipoora a twon celebrated in Bengal for it's numerous colleges a number Brahmans formed on association for the celebration of puja independently of the rules of shastra "
অর্থাৎ এই পত্রিকার প্রকাশিত খবর অনুযায়ী এই পুজা শুরু ১৭৯০ সালে , ক্যালকাটা রিভিউ পত্রিকা এই মত গ্রহণ করেছে তবে সাল নিয়ে ভিন্ন মত রয়েছে। বিন্ধ্যবাসীনি তলা নিবাসী উষানাথ মুখোপাধ্যায় মহাশয় এই পুজোর দ্বিতীয় বর্ষের পুজোর একটি ফর্দ খুঁজে পান। যে ফর্দের কথা শ্রী বিনয় ঘোষ তার পশ্চিম বঙ্গের সংস্কৃতি গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন (পাতা ৪৭৭ ২ সংষ্করন) । যে ফর্দের উল্লেখিত সাল বাংলার ১১৬৭ সন অর্থাৎ ১৭৬০ সাল।


সেই মতে এই পুজোর ২৬০ বছরের। যে সাল মেনে বর্তমানে এই পুজা হচ্ছে .
 শোনা যায় সেই সময় ব্রাহ্মণ রা ছোট ছোট দলে ভাগ হয়ে বিভিন্ন জেলায় চাঁদা সংগ্রহ করতে যেতেন। ক্রমে এই বারোয়ারী পুজা জনপ্রিয় হয়ে ওঠে এবং সমগ্র বাংলায় ছড়িয়ে পড়ে। গুপ্তিপাড়ার বারোয়ারির সাথে শান্তিপুরের বারোয়ারির প্রতিযোগিতা র কৌতুক চিত্র কালীপ্রসন্ন সিংহ এর " হুতোম পেঁচা র নকসা " তেও পাওয়া যায়।
জমিদার বাড়ি অলিন্দ থেকে সার্বজনীন আঙিনায় উৎসব কে নিয়ে আসার ২৬০ বছরের গৌরব নিয়ে আজও সাড়ম্বরে পালিত হয়ে চলেছে গুপ্তিপাড়ার বিন্ধ্যবাসিনী পুজো।

ভক্তের সাথে পথেই বিরাজ করেন " পথের মা "

             ভক্তের সাথে পথেই বিরাজ করেন " পথের মা " গুগুল ম্যাপ পিচ রাস্তা থেকে ঢালাই রাস্তা পেরিয়ে বাড়ির উঠান দিয়ে যে মোড়ে নিয়ে ...