কৃষ্ণপুরে মাছ নিয়ে মানুষের মেলা
ভারী অবাক কান্ড হুগলীর আদিসপ্তগ্রামের কৃষ্ণপুরে।
বৈষ্ণব মন্দিরের পাশে বসেছে মাছের মেলা।
হ্যাঁ মাছের মেলা। মেলা অর্থাৎ মিলনক্ষেত্র আর
প্রত্যেক বছর মাঘের প্রথম দিনে এই অঞ্চল এক মিলন ক্ষেত্রেই পরিণত হয়। তাও এই
অদ্ভুত ঘটনা কে কেন্দ্র করে।
অদিসপ্তগ্রাম স্টেশন থেকে জি টি রোড ধরে কিমি
দুয়েক গিয়ে বাম হাতে গ্রামের মেঠো পথ দিয়ে এগোলেই কৃষ্ণপুর
গ্রাম আর সবুজে ঘেরা পরিবেশের মাঝে রয়েছে রঘুনাথ দাস গোস্বামী র
আখড়া। আর এই বৈষ্ণব আখড়ার পাশেই প্রত্যেক বছর মাঘ মাসের প্রথম দিনে পালিত হয়
উত্তরায়ন মেলা, যা স্থানীয় মানুষ দের কাছে মাছের মেলা নামে
পরিচিত। এই বছর এই মেলার বয়স হল ৫১৩ ।
বৈষ্ণব মন্দিরের পাশে মাছের মেলা! একটু খটকা
লাগে। কিন্তু এই প্রাচীন মেলার সাথে জড়িয়ে রয়েছে এক প্রাচীন কাহিনী।
এই অঞ্চলের এক সময় জমিদার ছিলেন গোবর্ধন
মজুমদার। এই গোবর্ধন মজুমদার এর একমাত্র ছেলে রঘুনাথ দাস গোস্বামী মাত্র ষোল বছর বয়সে ঘর ত্যাগ
করেছিলেন নিত্যানন্দ মহাপ্রভুর স্মরনে। বৈষ্ণব ধর্ম গ্রহণ করে দীর্ঘদিন বাদে তিনি
মকরসংক্রান্তির দিনে ফিরে আসেন এই কৃষ্ণপুরে।
জমিদারের
ছেলে ফিরে এসেছেন এই আনন্দে গ্রামের মানুষ জমিদার এর কাছে দরবার করেন
গ্রামের সকল মানুষকে পুকুরের মাছ ধরে পাতপেড়ে খাওয়ানোর ব্যবস্থা করতে হবে। ঠাকুর
বাড়ির উত্তর দিকে এই উত্সবের আয়োজন করা হয়। সেই থেকেই প্রতি বছর বসে এই মাছের
মেলা ।
আবার আর এক জনশ্রুতি বলছে,
শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর প্রধান শিষ্য বিজয়কৃষ্ণ গোস্বামী নীলাচল থেকে
ফেরার পথে একদিন রাত কাটান এই কৃষ্ণপুরে। বৈষ্ণব হয়েও ওইদিন মাছের ঝোল দিয়ে পরম
তৃপ্তিতে ভাত খেয়েছিলেন তিনি।
সেই ঘটনা কে স্মরণে রেখেই বৈষ্ণব সম্প্রদায়ের মানুষ শুরু করেন এই মেলা।
তবে কাহিনী কিংবা লোকশ্রুতি যাই থাক
আদিসপ্তগ্রামের কৃষ্ণপুরে র এই এক দিনের মেলা যেন মাছ মহতসব। আশপাশের বিভিন্ন
যায়গা থেকে মাছের ব্যবসায়ী রা তাদের পসরা নিয়ে আসে এই মেলায়। চলে দেদার কেনাকাটা।
পরিচিত রুই, কাতলা, ভেটকি
থেকে শুরু করে অচেনা হরেক রকম মাছ।
শুধু মাছ কেন কাকড়া কিনবা সামুদ্রিক প্রাণী ও
বেচাকেনা হয় এই মেলায়।
কথা হল মাছ ব্যবসায়ী নেপাল দাসের সাথে তিনি
এসেছেন ব্যান্ডেল থেকে। সাথে এনেছেন হরেক রকমের ভেটকি মাছ। অন্য সব মাছের ভিড়ে ও
এই মেলা আলো করে রয়েছে চির প্রতিদ্বন্দ্বী চিংড়ি আর ইলিশ ।
মাছের মেলা সত্যি অন্য রকম মাছ কে কোলে নিয়ে
ছবি কিংবা মাছের কানকো ধরে সেলফি ও এই মেলায় দেখা যায়। আসলে বাঙালি তো মাছ দেখে
আবেক প্রবণ।
তবে এই মেলায় শুধু যে মাছ রয়েছে তা নয়। একটা
গ্রাম্য মেলায় যা যা মেলে সব ই আছে এই উত্তরায়ণ মেলায়।
আর একদিনের এই মেলা স্থানীয় গন্ডী ছাড়িয়ে
বিস্তার করেছে জেলার আনাচে কানাচে ।জেলার সীমানার বাইরেও। মানুষ জন মেলা ও আখড়ার
চারপাশে ভিড় জমিয়েছে পিকনিকের জন্য। বলাবাহুল্য সকলের মেনুতেই থাকছে মাছের পদ।
সবুজে ঘেরা মেঠো গ্রাম তার মাঝে এই বৈষ্ণব আখড়া
যেখানে চলছে নাম সংকির্তন। আর পাশে রাস্তার একধারে গ্রামীণ মেলা অন্ত দিকে মাছের
হাট। আর একটু এগোতেই সার বেধে মানুষ পিকনিকে মসগুল। সবমিলিয়ে মাঘের প্রথম দিনে
আদিসপ্তগ্রামের কৃষ্ণপুর এ যেন মানুষের মেলা।
তবে এ মেলা একদিনের। এই বছর শেষ হয়ে গেল এ মেলা
আসছে বছর আবার হবে।
No comments:
Post a Comment