শতাব্দী পেরিয়ে অগ্নি দেবতা রূপে ব্রম্ভাপুজো
অগ্নিদেব নন আগুনের হাত থেকে বাঁচতে আরাধনা করা হয় অগ্নি দেবতা ব্রম্ভার। ১৬০ বছর ধরে এই রীতি পালন হচ্ছে হুগলী জেলার রিষড়ায়। শতাব্দী পেরিয়ে যে পুজো আজও পুরানো সকল রীতি মেনে পালিত হয়ে চলেছে।
জনশ্রুতি বলছে বহু বছর আগে রিষড়া অঞ্চলের গঙ্গার ধারে
হাট বসত, শ্যামপুরের হাট নামে পরিচিত সেই হাট ছিল পান ও গুড়ের জন্য প্রসিদ্ধ
একবার ভয়াবহ আগুনে সেই হাট ভস্মীভূত হয়ে যায়। হাট পুড়ে যাওয়ায় এক গভীর সমস্যার সম্মুখীন হয় হাটুরেরা। এই রকম সময় এক সাধক পুরুষ স্থানীয় সাধুখাঁ পরিবার কে প্রজাপতি ব্রম্ভার আরাধনা করতে বলেন ,
সেই আদেশ অনুসারে শুরু হয় ব্রম্ভা পুজোর। যা আজও চলছে। প্রথম যেদিন পুজো সূচনা হয় সে দিন টি ছিল পয়লা মাঘ,
সেই থেকে প্রতি বছর পয়লা মাঘ ব্রম্ভা পুজোর আয়োজন হয় রিষড়ার গঙ্গার ধারের ব্রম্ভাতলায়। তবে এই পুজো আজ সর্বজনীন কিন্তু প্রাচীন রীতি নীতির কোন হেরফের হয়নি। আজও রীতি মেনে অগ্রহায়ণ মাসের শেষ দিনে ব্রম্ভা মন্দিরে ধ্বজা উড়িয়ে উৎসবের সূচনা হয় ,
পৌষের পয়লা তারিখে কাঠামো তৈরি করে মূর্তি গড়ার কাজ শুরু হয়। একমাসে মূর্তি গড়ার কাজ সম্পন্ন হলে
পৌষ সংক্রান্তির দিন দেবতার ঘট স্থাপন হয়। পয়লা মাঘ হয় মহাপুজো। কাঠামোতে ব্রহ্মা-বিষ্ণু-মহেশ্বর ত্রিদেব
থাকেন। অগ্নিবর্ণের ব্রহ্মার মাঝে থাকে তাঁর বাহন হাঁস। ব্রহ্মার হাতে কমুণ্ডল। ডান পাশে থাকেন মহেশ্বর। বাম দিকে বিষ্ণু।
এই পুজো সার্বজনীন হলেও স্থানীয় সাধুখাঁ পরিবারের নাম এই পুজোর সাথে অতপ্রত ভাবে জড়িয়ে রয়েছে, সাধুখাঁ পরিবারের শ্রী জগ্নেশ্বর সাধুখাঁ এক চালার উপর দেবতা স্থাপন করেছিলেন। পরবর্তীকালে শ্রী বটকৃষ্ণ সাধুখাঁ ও শ্রী জীবন কৃষ্ণ সাধুখাঁ ১৩৩৪ সালে চালাঘরকে মন্দিরের রূপ দেন।
শতাব্দী প্রাচীন এই পুজো তে রিষড়া তথা পার্শ্ববর্তি অঞ্চল এমন কী রিষড়ার উল্টো পাড়ে অবস্থিত খড়দহ থেকে ও মানুষ এই পুজোয় অংশগ্রহণ করেন। পয়লা মাঘ সারাদিন মানুষের আনাগোনায় জমজমাট থাকে মন্দির চত্বর , চলে মানতের পুজো।
পুজো উপলক্ষে ভোগের আয়োজন হয়। শেষ দিন অনুষ্ঠিত সাংষ্কৃতিক অনুষ্ঠান। ব্যতক্রমী ভাবে বিসর্জনের সময় স্থানীয় ছেলেরা ধুতি পরে দেবতা কে বরণ করেন।
পুজো উপলক্ষে ব্রম্ভা মন্দির চত্বরে বসা মেলায় নানা জিনিষ তো চোখে পড়বেই , তবে এই পুজোয় এলে অবশ্যই চাক্ষুস করে স্বাদ নিতে হবে এই পুজোর আরেক আকর্ষণ নারকেলের সন্দেশের।