Thursday, 31 October 2024

ভক্তের সাথে পথেই বিরাজ করেন " পথের মা "

 

          ভক্তের সাথে পথেই বিরাজ করেন " পথের মা "



গুগুল ম্যাপ পিচ রাস্তা থেকে ঢালাই রাস্তা পেরিয়ে বাড়ির উঠান দিয়ে যে মোড়ে নিয়ে গিয়ে তুলল সেই মোড়ের পথের ধারে বিশাল আকারে চরাচর ঝলমলিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন শ্যামা মা  । ভিড় এড়িয়ে বাইক টা দাড় করাতেই এই ছোট্ট জনপদ আমার মন জিতে নিলো যখন বছর চোদ্দর বাচ্চা টা আমার বাইকে লাগানো স্টিকার টা ছুঁয়ে আমায় বলল জয় মা কালী জয় মোহনবাগান বাগান ।

কিন্তু হঠাৎ এই জনপদে কেন । আর এই বিশাল আকার শ্যামা মূর্তি ? হুগলী জেলার পান্ডুয়া ব্লকের ছোট্ট জনপদ মন্ডলাই । পান্ডুয়ার দামোদর বাঁধ পেরিয়ে কালনা পাণ্ডুয়া রোড ধরে চারকিলোমিটার দূরে অবস্থিত এই ছোট্ট জনপদ । এমনি তে পাণ্ডুয়া শহর বিখ্যাত তার কালী পুজোর জন্য কিন্তু পান্ডুয়ার অদূরে এই ছোট্ট গ্রামে বিরাজ করেন এক দেবী । যার অবস্থান এই মন্ডলাই গ্রামের রাস্তার ধারে তাই তিনি পথের কালী । ভক্তের পথের মা।  প্রতি দীপান্তিতা কালীপুজো মহাসমারহে পূজিতা হন মা । মেতে ওঠে মন্ডলাই গ্রাম তো বটেই তার সাথে দূর দুরান্ত থেকে আসা ভক্তের দল । পথের ধারে স্বমহিমায় বিরাজ করেন মা । ভক্ত রা দন্ডী কাটে কেউ কেউ আবার মনস্কামনা পূর্ণ হলে বুক চিরে রক্ত ও দেয় । স্থানীয় মানুষ এর বক্তব্য অনুযায়ী এ পুজোর কাল নির্নয় সম্ভব নয় , আনুমানিক চারশো বছরের প্রাচীন এই পুজো । তবে পথের মা এর প্রতিষ্ঠার সাথে জড়িয়ে আছে এক লোকশ্রুতি ।

অতীতে এই গ্রামের পাস দিয়ে বয়ে যেত কঙ্ক নামের এক নদী । সে নদীর তিরে ছিলো এক শশ্মান ভূমি । শাপদ সঙ্কুল জঙ্গল ঘেরা সেই ভূমি তে ছিলো কাপালিক দের আস্তানা তন্ত্রভূমি ।

সেখানেই এক তন্ত্রসাধকের হাত ধরে এই কালীপুজোর শুরু হয় । জনশ্রুতি এমন, ওই তান্ত্রিক এক রাতের মধ্যে দীর্ঘাঙ্গি কালীমূর্তি তৈরির পর পুজো করতেন। সেই রাতেই বিসর্জন দিতেন। সবটাই করতেন লোক চক্ষুর আড়ালে। তবে এক গ্রামবাসীর চোখে পরে যায় কাপালিকের এই ক্রিয়াকলাপ । তারপর তার হাতেই পুজোর সমস্ত কিছু সমর্পণ করে নিখোঁজ হয়ে যান সেই তন্ত্রসাধক । সেই থেকে 

শশ্মানের সেই মা লোক মাঝে বিরাজ পথের ধারে পথের মা রূপে । লোক শ্রুতি এও সেই তন্ত্রসাধকের সমাধী পথের মা এর বেদী । 




বর্তমানে এই পুজো সর্বজনীন । সোনা রূপার বহু মূল্য অংলকারে সুসজ্জিতা হন মা । কমিটির হিসাব অনুযায়ী প্রায় পঁচিশ ভরি সোনা ও প্রায় ষাট ভরি রূপার অংকারে মাকে সাজানো হয় । পথের মা পুজো পরিচালন কমিটির তথ্য অনুয়ায়ী মা এর অলংকারের হিসাব বেস চোখে পরার মত । সব ই কিন্তু মা এর ভক্ত দের দেওয়া। 


সোনার গহনা

১। টায়রা


২। নথ (চেন সহ)


৩। নাকছবি


৪। সোনার হার (বড়)


৫। 'মা' লেখা লকেট সহ চেন


৬  সোনার টিপ ১৬টি 

৭। সোনার জিভ ২টি




৬। রূপার চোখ (৩টি)


৩। সোনার চোখ ২টি


৪। সোনার নাকছবি (১টি)

রূপার গহনা


১। বড় মুকুট


১২। কোমড় ঝাপটা


২। গলার চিক


১৩। মুণ্ডুমালা ১৪। মল (চারটি)


৩। গলার চিক (পুঁতি সহ)


৪। পুষ্পহার


৫। সীতাহার


১৫। বিছা (একটি)


১৬। ধুতরা ফুল (দুটি)


৬। জবা ফুলের মুণ্ডমালা


১৭। পায়ের সাজ (একটি) ১৮। আউট (একটি)


৬। বড় টিপ


৭। টিকলি


৮। নোয়া (চারটি)


১৯। চাঁদমালা


৯। বালা (এক জোড়া)


 ত্রিশূল ,মানতাষা (চারটি), লোহার নোয়া, আর্ম লেট (চারটি)

, কানের ঝুমকো, রূপার খাঁড়া




সুসজ্জিতা দীর্ঘাঙ্গী কালী মাতা সত্যিই মনমুগ্ধ কর । যে রূপ দেখলে ভক্তিভাব জেগে ওঠে । আর সেই টানেই বোধহয় ভক্ত সমাগম । অচেনা রাস্তায় গুগুল ম্যাপ এর সাহায্য নেওয়া অভ্যাস তাই না হলে হাতে পুজো র ডালা নিয়ে নতুন জামায় সেজে যে পথ দিয়ে শয়ে শয়ে মানুষ চলছিল সেই রাস্তায় পা বাড়লে অবশ্যই দেখা পেতাম পথের মা এর ।

ভক্তের সাথে পথেই বিরাজ করেন " পথের মা "

             ভক্তের সাথে পথেই বিরাজ করেন " পথের মা " গুগুল ম্যাপ পিচ রাস্তা থেকে ঢালাই রাস্তা পেরিয়ে বাড়ির উঠান দিয়ে যে মোড়ে নিয়ে ...