Friday, 26 July 2019


                                      নিত্যানন্দ পুর এর জোড়া শিব মন্দির 




                                                                   ( জোড়া শিব মন্দির )



গ্রামের নাম নিত্যানন্দ পুর .. হাওড়া কাটোয়া লাইনের আমাদের ভীষণ পরিচিত স্টেশন কুন্তিঘাট , এই স্টেশন এর আগের নাম নিত্যানন্দ পুর . স্টেশনের নাম বদল হয়েছে ঠিকই . কিন্তু কুন্তিঘাট স্টেশন থেকে আসাম রোড পেরিয়ে ২কিমি দুরে বেহুলা নদীর ধারে র ছোট্ট গ্রাম নিত্যানন্দ পুর .. 
আপাত বৈচিত্র্য হীন এই গ্রামে .. মাথা উচুঁ করে দাড়িয়ে রয়েছে .. দুটি প্রাচীন আটচালা শৈলীর শিব মন্দির .. মন্দিরের গায়ের টেরাকোটার কাজ ক্ষয়প্রাপ্ত কিন্তু কিছু নিদর্শন আজও আছে ..
সম্প্রতি মন্দির দুটি সংষ্কার করার জন্য রং করা হয়েছে .. তাতে মন্দিরের প্রাচীনতায় প্রলেপ পরার সাথে মন্দিরের ঐতিহ্য একটু ফিকে হয়েছে .. 



                                                           ( মন্দিরের গায়ে টেরাকোটার কাজ )



কিন্তু তবুও ১৭৮৩ সালে স্থানীয় ভট্টাচার্য পরিবারের এই মন্দির দুটি আপন মহিমায় মহিমান্বিত .. মন্দির দুটি ঈশানেশ্বর ও ত্রম্বকেশ্বর নামে পরিচিত .. ভট্টচার্য পরিবারের শ্রী শঙ্কর নারায়ণ ভট্টাচার্য এই মন্দির দুটি প্রতিষ্ঠা করেন.
এই মন্দির দুটির আরেক বৈশিষ্ট্য হল এই যে , সাধারণত মন্দিরের গায়ের যে অলংকরণ বা টেরাকোটার কাজ থাকে সেই কাজ যিনি করেছিলেন তার নাম পাওয়া যায়না . এক্ষেত্রে তার ব্যাতিক্রম হয়েছে .. এই মন্দির দুটিতে যে স্থপতি টেরাকোটার কাজ করেছিলেন তিনি হলেন স্থপতি চিন্তামণি দে .. 


< ছবি ও তথ্য - সুমন্ত বড়াল ) 

হুগলী দর্শন


Tuesday, 16 July 2019

                      

                                   নৈশব্দ ঘেরা এক বৌদ্ধ বিহার   






ইতিহাস , অধুনিকতা কিংবা অভিনবত্ব সবকিছুর মিলমিশ এই আমাদের হুগলী জেলা .এই জেলার এমন কিছু উৎসব কিংবা লোকাচার রয়েছে যা ভূভারতে কোথাও নেই . এই জেলা যেন সর্ব ধর্ম এর মিলনক্ষেত্র হিন্দু , মুসলিম , বৌদ্ধ , শিখ সব মিলেমিশে একাকার   আবার এ জেলায় এমন কিছু সৌধ রয়েছে যা এ রাজ্যে বিশেষ দেখা যায়না . সে হতে পারে প্রাচীন মন্দির কিনবা মসজিদ কিনবা গির্জা উদাহরণ হিসাবে বাশবেড়িয়ার হংসেশবরী কিনবা চুচড়ার মতিঝিল মসজিদ আবার শ্রীরামপুরের ওলাভ চার্চ এই জেলা জুড়ে রয়েছে শয়ে শয়ে উদাহরণ আজ বলবো এমনই এক সৌধের কথা এক বৌদ্ধ বিহারের কথা
এই জেলার পুরশুড়ার দেউল পাড়া অঞ্চলের  সেই সৌধের কথা বলি .. বয়সের দিক থেকে কিছুটা নবীন হলেও এই রাজ্যে এমন সৌধ বিশেষ নেই .. এই জেলায় এই একটি আছে ..

হ্যাঁ দেউল পাড়ার বৌদ্ধ বিহারে  কথা বলছি . যে মন্দিরের আনুষ্ঠানিক নাম শ্রী শ্রী ত্রি রত্না সংঘ শান্তিবিতান বৌদ্ধ বিহারচব্বিশ তম দালাইলামা স্বয়ং এসেছেন এই বৌদ্ধ বিহারে। এই বৌদ্ধ বিহারের বয়স বছর ৩৫  
৯৮৫ সালে এই বৌদ্ধ বিহার নির্মাণ করেন তারক চন্দ্র বাইরি মহাশয় এই পরিবারের  যথেষ্ঠ খ্যাতী রয়েছে স্থানীয় মানুষের কাছে এই পরিবার নির্মিত রথ কিনবা স্কুল বাড়ি এই অঞ্চলে দ্রষ্টব্য
দামোদারের পাড়ে নারকেল গাছ আর বাগান ঘেরা এই বৌদ্ধ বিহারের নৈশব্দ ঘন পরিবেশ মনে এক অনাবিল শান্তি দেয় ছায়াঘন  পরিবেশে  মন এক অন্য শান্তির সন্ধান পায়
এই বৌদ্ধ বিহারের পরিবেশ প্রশান্তির এক অন্য জগতের খোজ দেয় চারিদিকের সবুজ , পাখীর ডাক এবং বৌদ্ধ মন্দিরের নিরবতা সবমিলিয়ে এক মনমুগ্ধ পরিবেশ


আলাপ হলো এই  বৌদ্ধ বিহারের কেয়ার টেকার শ্রী সুকুমার বেড়ার সাথে .. আমরা যখন দেউল পাড়া পৌছেছিলাম তখন বৌদ্ধ বিহার বন্ধ হয়ে গেছে .. কিন্তু সুকুমার বাবু কে অনুরোধ করায় উনি মন্দির খুলে দিলেন .. আমাদের নানা প্রশ্নের সব উত্তর ও দিলেন ..
বয়সে নবীন এই বিহারে সেই ভাবে ইতিহাস প্রসিদ্ধ না হলেও , এই বৌদ্ধ বিহার তার আপন মহিমায় মহিমান্বিত বৌদ্ধ বিহারের  ভিতরের দেওয়ালে রয়েছে বৌদ্ধের জীবনের নানা কাহিনী র ছবি আর রয়েছে শ্বেত পাথরের শান্ত বৌদ্ধ মূর্তি যা বড়ই মন মুগদ্ধকর  





পুড়শুড়ার দেউল পাড়ার এই  বৌদ্ধ বিহার প্রত্যেক বৌদ্ধ পূর্ণিমা য় উৎসবে মেতে ওঠে স্থানীয় মানুষ থেকে শুরু করে দূরান্তের মানুষ উৎসবে সামিল হন দেউলপাড়া পৌঁছেও যাওয়া যায়  খুব সহজে  রেল পথে তারকেশ্বর ষ্টেশন এ নেমে বাসে দেউল পাড়া কিনবা সড়ক পথে চাপাডাঙ্গা হয়ে দামোদর ব্রিজ পেরিয়ে পুড়শুরা মোড় থেকে ডানদিকে বাক নিয়ে (আরামবাগের দিক থেকে বামদিকে ) দামোদর নদী কে ডান পাশে রেখে নদীর ধারের রাস্তা দিয়ে পৌঁছে জান দেউলপাড়া  



 নদী , ব্রিজ , বৌদ্ধ মন্দির সব মিলিয়ে শহরের কোলাহল ছেড়ে দারুণ আউটিং তবে ভয় কিনবা খারাপ লাগা বলতে একটাই .. দামোদারের তীর বর্তী এই অঞ্চল প্রত্যেক বর্ষা তেই বন্যার জলে ডুবে যায় সেই সময় এই মন্দিরে ও জল ঢুকে যায়

< ছবি ও তথ্য - সুমন্ত বড়াল > 

Thursday, 11 July 2019

                       রামপাড়ার "নন্দী "দের রথকথা 




 এই জেলার এক ছোট্ট জনপদ .. রামপাড়া .. শিয়াখালা মোড় থেকে অটো বা ট্রেকারে পৌঁছে যেতে পারেন .. রামপাড়া তে .. শিয়াখালা থেকে বিখ্যাত ফুরফুরা শরীফের দিকে না বেকে আপনি উদয়নারায়ণ পুরের দিকে ৩কিলোমিটার গেলেই ছোট্ট জনপদ এই রামপাড়া .. এই রামপাড়ার বিখ্যাত বনেদি বাড়ি নন্দী বাড়ি .. নন্দী বাড়ির কালী মন্দির স্থাপত্য এর দিক থেকে বেশ অন্যতম .. সে কথা আজ না .. আজ এই নন্দী বাড়ির রথের গল্প বলবো .. কালী মন্দির চত্বরে ই রয়েছে এই পরিবারের 



                                                 ( নন্দী পরিবারে একচালা জগন্নাথ মন্দির )



জগন্নাথ মন্দির আর নিম দারুর জগন্নাথ মূর্তি .. এই পরিবারের জ্যেষ্ঠ সদস্য ফেলারাম নন্দী র থেকে জানা গেলো নানা তথ্য .. এই জগন্নাথ মূর্তি শতাব্দী প্রাচীন হলেও এই রথের বয়স অতটা নয় .. ১৩৩৬ বঙ্গাব্দ অর্থাৎ ইংরেজি ১৯২৯ শ্রী মধূসূদন নন্দী মহাশয় এই প্রতিষ্ঠা করেন .. বিগত নব্বই বছর ধরে নন্দী পরিবার সাড়ম্বরে এই রথযাত্রা পালন করে আসছে .. 
সোজা রথের দিন মহাসমারোহে এই নন্দী বাড়ির ঠাকুর দালান থেকে স্থানীয় বারোয়ারি তলায় নিয়ে যাওয়া হয় . আট দিন সেখানে থাকার পর পুনরায় জগন্নাথ দেব নন্দী বাড়িতে তার আপন মন্দিরে ফেরেন ..
 
 
                                                                     ( দারু মূর্তি )

এই রথ নিয়ে অনেক কথা বললেন . এই সময়ে নন্দী বাড়ির রক্ষনাবেক্ষন এর দায়িত্বে থাকা এই পরিবারের সদস্য শ্রী পলাশ নন্দী মহাশয় .. বড় অমায়িক তার ব্যবহার .

 
                                                   ( রথের গায়ে নানান কারুকার্য)

তাঁর থেকে জানা গেল যে এই রথ নয়টি চূড়া বিশিষ্ট , তবে বর্তমানে এই রথের মূল চূড়া টি ভেঙে গেছে ।  রথের গায়ে নানান কারুকার্য করা । কাঠের উপর খোদাই করা টেরাকোটা র মত মৃত্যু লতা এই রথে অলঙ্কৃত । এত সুন্দর কারুকার্য করা রথ এই জেলায় প্রায় নেই বললেই চলে । সেদিক থেকে নন্দী বাড়ির রথ বেশ উল্লেখ যোগ্য ।
বর্তমানে এই নন্দী বাড়ি পর্যটকদের জন্য ভাড়া দেওয়া হচ্ছে .. শহুরে পরিবেশ ছেড়ে নিখাদ গ্রাম্য পরিবেশে কটাদিন কাটাতে ঘুরে আসতে পারেন .. রামপাড়া .. প্রাচীন কালি মন্দির , জগন্নাথ মন্দির আর কিছু দুরে ফুরফুরা শরিফ , আটপুর .. আর উপরি পাওনা বনেদি বাড়ির রাত্রি বাস ..
সেক্ষেত্রে যোগাযোগ করতে পারেন
শ্রী পলাশ নন্দী ( ফোন - 9831636481) র সাথে ...
< ছবি ও তথ্য - সুমন্ত বড়াল >

Saturday, 6 July 2019

                    হোড়েয়ার নিয়োগী পরিবারের রথযাত্রা 






আমাদের এই হুগলী জেলা .. নানা প্রাচীন স্থাপত্য আর ঐতিহ্যে  ভরপুর .. বাঙালির বারোমাসের তেরোপার্বণে র প্রত্যেক পার্বনের সাথেই যেন এই জেলার ঐতিহ্য জড়িয়ে আছে .. এখন আষাঢ় মাস .. রথযাত্রার মাস .. আর এই বঙ্গদেশে রথ মানেই মাহেশ তারপর গুপ্তিপাড়া .. আকষ্মিক ভাবে এই দুই জায়গা আমাদের এই প্রিয় জেলায় ..
তবে এই দুই জায়গা ছাড়াও বেশ কিছু প্রাচীন রথ আছে এই জেলায় .. যে রথ গুলির অনুমানিক বয়স ২০০বছরের কম নয় .

                                                            ( নিয়োগী পরিবারের রথ ) 

যেমন জেলার এক বর্ধিষ্ণু গ্রাম হোয়েড়া .. খন্যান ও তেলান্ডুর মাঝে এই গ্রাম .. এই গ্রামের প্রায় ২০০বছরের পুরানো নিয়োগী পরিবারের রথ ..
নিয়োগী পরিবারের বর্তমান সদস্য শ্রী অরুপ নিয়োগী , অম্লান নিয়োগী ও নিয়োগী পরিবারের সদস্য দের সাথে একান্ত আলাপচারিতায় জানা যায় এ রথের ইতিহাস ..

                                                                      ( রথের পুতুল )


এই রথে পূজিত হন নিয়োগী পরিবারের কুল দেবতা শ্রীধর জিঊ .. রথের দিন সকালে মহা সাড়ম্বরে নিজেদের ঠাকুর দালানে পুজার পর শ্রীধর জীঊ প্রতিক্রিত শাল গ্রাম শিলা রথে আনা হয় .. এবং রথ টান হয় ..
এই রথ উৎসব কে কেন্দ্র করে স্থানীয় একটি মেলাও বসে .. মেলাটি চলবে রথ থেকে আগামী প্রায় একমাস ..


                                                                         ( রথের মেলা )

তবে হোয়েড়ার নিয়োগী পরিবার এর শ্রীধর জিঊ এর এই রথযাত্রা কেন্দ্র করে জিটি রোড এর ধারেই. বসে কাঁঠালের মেলা .. এই মেলা এই জেলায় আর চোখে পড়েনি ..


                                                        ( রথ উপলক্ষ্যে কাঁঠালের মেলা )

তবে কাঁঠালের মেলা , হরেক রকম এর কাঁঠালের পসরা শুধু রথের দিনই থাকে ।


( সুমন্ত বড়াল )
হুগলী দর্শন

ভক্তের সাথে পথেই বিরাজ করেন " পথের মা "

             ভক্তের সাথে পথেই বিরাজ করেন " পথের মা " গুগুল ম্যাপ পিচ রাস্তা থেকে ঢালাই রাস্তা পেরিয়ে বাড়ির উঠান দিয়ে যে মোড়ে নিয়ে ...