Friday, 27 September 2019

                                              বড় বাড়ির বড় পুজো 
                                             
                                                 < জিরাটের ফকির চাঁদ চক্রবর্তীর পুজো >                                              





তখন সময় সপ্তদশ শতাব্দীর শেষভাগ এই জেলার পরিচিত জনপদ জিরাট তখন খুর্দ্দেশা আমিন মহম্মদপুর নামে খ্যাত। এই মহম্মদ পুর তখন শেওড়াফুলির দশ আনি রাজার অধীন।  সেই সময় এই মহম্মপুরে এলেন যশোরের পন্ডিত রামেশ্বর বিদ্যারত্নের পুত্র পন্ডিত অভয়রাম সার্বভৌম। আজ সেই অভয়রাম সার্বভৌম এর বংশের গল্প সেই বংশের দুর্গাপূজা র গল্প।
অভমরাম যখন মহম্মদপুর অধুনা  জিরাটে আসেন তখন তার বয়স সত্তর। রাজপরিবারের সাথে সুসম্পর্ক থাকার ফলে দশ আনির রাজা অভয়রাম কে পাঁচশো বিঘা জমি দান করেন। তিনি এরপর নিজ বসত বাড়ি নির্মাণ করেন আর বাড়ির সামনে শ্রী শ্রী মৃন্ময়ী কালী ঠাকুরানির মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন। পরবর্তী কালে অভয়রামের পুত্র শ্রীকৃষ্ণ এই বংশের খ্যাতি বিস্তার ঘটান। শ্রীকৃষ্ণ এর ন্যায় শাস্ত্রের অসাধারণ দক্ষতার জন্য মুঘল সম্রাট আওরঙ্গজেব তাকে 'চক্রবর্তী 'উপাধি তে ভূষিত করেন। এরপর থেকেই এই বংশে পরিবর্তন এর ছোঁয়া লাগে শ্রীকৃষ্ণ এর দুই পুত্র বিষ্ণু রাম ও মুকুন্দরাম অধ্যাপনা কিনবা শাস্ত্রচর্চার পেশা ছেড়ে ব্যবসা করতে শুরু করেন। পুর্তগীজ দের সাথে বানিজ্য করে মুকুন্দরাম প্রতিপত্তি করেন। তিনি প্রতিষ্ঠা করলেন পাষাণময়ী কালী মন্দির।


তবে অভয়রাম এর বংশের সর্বাপেক্ষা খ্যাতি প্রতিপত্তি নাম হল, বিষ্ণুরাম এর পুত্র ফকির চাঁদ চক্রবর্তীর সময়। ফকির চাঁদের সময়কাল এই বংশের সবর্ণ যুগ বলা যায়।  কলকাতার বিখ্যাত "টমাস দ্য সুজা " ঝাড়লন্ঠণ কোম্পানির প্রধান বেনিয়ান হিসাবে তিনি এতটাই খ্যাতি অর্জন করলেন যে তার জীবিত কালেই কলকাতার গড়নহাটা অঞ্চলে একটি রাস্তা তার নামে নামকরণ করা হয়।
এই ফকিরচাঁদ নিজের বসতবাড়ি অঞ্চলে ও নানা নির্মাণ করতে শুরু করলেন । ১৭৬৩ তে তিনি প্রতিষ্টা করলেন জোড়া শিবমন্দির যা আজও জিরাটের ল্যান্ডমার্ক।
১৭৯৭ সালে ফকির চাঁদই প্রথম চক্রবর্তী বংশে দুর্গা পূজা সূচনা করলেন। ২২২ বাইশ বছরের পুরানো ফকির চন্দ্রের সেই পুজো আজ পরিচিত জিরাটের বড়বাড়ির পুজো নামে। জেলার
প্রাচীন এই পুজোয় রয়েছে নিজস্ব কিছু বৈশিষ্ট্য ও পারিবারিক কিছু রীতি। রীতি মেনে জন্মাষ্টমী তে কাঠামো পুজোর মধ্যে দিয়ে শুরু হয় বড় বাড়ির পুজো। পাটুলির পাল বংশের মৃৎশিল্পীরা বংশপরম্পরায় এই বাড়ির মূর্তি তৈরী করে আসছেন।







বাড়িটি কালের নিয়মে কিছু পরিবর্তন হলেও খিলান যুক্ত ঠাকুর দালান আজও আছে। এই ঠাকুর দালানেই চলে মূর্তি তৈরী থেকে পুজা অর্চনা। ঠাকুর দালান টি বেশ নজর কারে। ষষ্ঠী তে মৃন্ময়ী কালি মন্দিরে পুজোর পরে হয় দেবীর বোধন। চক্রবর্তী দের বড়বাড়ির পুজো তে ঢাকের আওয়াজ শোনা যায়না প্রাচীনকাল থেকে ঢোলের তালে মায়ের পুজো হয়। পুজোর চারদিন ভোগ শীতল নৈবেদ্য তে চলে পুজা তবে বলি প্রথা র চল এখানে নেই।





এইসব এর মধ্যে বড়বাড়ির পুজো তে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য দিক হলো তার বিসর্জন। এই বড়বাড়ির ই প্রতিবেশী আমার বন্ধু বিক্রম জিত মুখার্জী র আমন্ত্রণে সেই বিসর্জন পর্ব দেখা র সুযোগ হয়।  বিক্রম এর কাছেই এই বাড়ির সব গল্প শোনা। আর এই বাড়ি সম্বন্ধে আগ্রহ জন্মায় ওর কথা শুনে।  যাইহোক আসি বিসর্জন পর্বে। ।



দশমীর দিন পান্তা ভাত,  কচুর শাক এবং চালতার চাটনি দিয়ে হয় দেবীর ভোগ তারপর বিকালে বেহারা কাধে দেবী মুর্তি বিসর্জনে র উদ্দেশ্যে রওনা হয়। প্রচলিত রীতি মেনে আগে জোড়া নৌকায় বসিয়ে গঙ্গায় দেবী বির্সজন হত তবে বর্তমানে একটি নৌকা করে মাঝগঙ্গায় বিসর্জন করা হয়। বিসর্জন উপলক্ষে স্থানীয় মানুষের উৎসাহ চোখে পড়ার মত।




ইতিহাস আধুনিকতা কিনবা প্রাচীনতা মাখা ঠাকুর দালান মফস্বল এর শান্ত পরিবেশ আর চক্রবর্তী বাড়ির মাতৃ মূর্তির মুগ্ধ করা রূপ । সবমিলিয়ে জিরাটের বড়বাড়ির পুজো জমজমাট।

( ছবি ও লেখা - সুমন্ত বড়াল )
হুগলী দর্শন

Saturday, 21 September 2019

                ব্যাস্ত রাস্তার পাশে মোঘল আমলের মন্দির 




নানা বৈচিত্র্যে ভরা আমাদের এই জেলা .. এই জেলার শহর থেকে গ্রামের অলিগলি তে ছড়িয়ে রয়েছে নানান প্রাচীন ঐতিহাসিক নিদর্শন .. আপনি ধরুন ব্যাস্ত শহরের ব্যস্ত কোন রাস্তা দিয়ে যাচ্ছেন আপনি হয়ত খেয়াল করেন নি কিংবা খেয়াল করেও শুধু মাত্র একটা মন্দির ভেবে এড়িয়ে গেছেন .. আপনি জানতেই পারলেন না আপনি আনুমানিক ৪০০ বছর পুরানো মোঘল আমলে তৈরী কোন প্রাচীন মন্দির মিস করে গেলেন .. হ্যাঁ হতেই পারে এমন ..
জেলার সদর শহরের ব্যস্ত তম খড়োবাজার অঞ্চলে নেতাজি সুভাষ রোডে রয়েছে এমন ই এক মন্দির .. সম্রাট আকবরের একজন জায়গীরদার ছিলেন জিতেন রায় , ইনি ছিলেন চুচড়া অঞ্চলের জায়গীরদার .. সম্রাট আকবরের রাজস্বসচিব টোডরমল্ল জিতেন রায় কে চুঁচুড়া অঞ্চলের জায়গীরদার হিসেবে নিযুক্ত করেন।এই জিতেন রায় নির্মিত মন্দির দয়াময়ী কালীমন্দির নামে পরিচিত 


..

  আনুমানিক ৪০০ বছর পুরানো এই মন্দিরের বেশ কয়েকটি বৈশিষ্ঠ্য চোখেপড়ে । এই মন্দিরের কোন নাট মন্দির নেই ..  মূল মন্দিরটি গম্বুজ আকৃতির চূড়াবিশিষ্ট এই মন্দিরে অনেক টা যায়গা জুড়ে রয়েছে বাধানো প্রাঙ্গন ..আর চারটি শিব মন্দির ..এই মন্দিরের দেবী মূর্তি ও একটু অন্যরকম 
মাতৃ মূর্তির মুখায়ব কিছুটা লম্বাটে , কষ্ঠিপাথরের এই দেবী মূর্তির জিহ্বা টি সোনার ..




দেবীমন্দিরের বাইরে রয়েছে ঘেরা বারান্দা . ভক্তগণ যে বারান্দায় দেবী আরাধনায় মগ্ন থাকেন ..
বতর্মানে স্থানীয় পৌরসভার উদ্যোগ মন্দির ও মন্দির চতবর সংষ্কার ও সৌন্দর্যায়ন করা হয়েছে ..
< ছবি ও তথ্য - সুমন্ত বড়াল >

হুগলী দর্শন

ভক্তের সাথে পথেই বিরাজ করেন " পথের মা "

             ভক্তের সাথে পথেই বিরাজ করেন " পথের মা " গুগুল ম্যাপ পিচ রাস্তা থেকে ঢালাই রাস্তা পেরিয়ে বাড়ির উঠান দিয়ে যে মোড়ে নিয়ে ...