রঘু ডাকাত আর গগণ ডাকাতের রক্তচক্ষু কালী
( সিঙ্গুরের ডাকাতে কালী )
সুমন্ত বড়াল
হুগলী জেলার কালীক্ষেত্র সন্ধানে বেড়িয়ে কিছুটা
ঘাবড়ে যাওয়ার দশা। কালী কলকাত্তা ওয়ালী না বলে যদি কালী হুগলীওয়ালী বলি তাহলে কিছু
ভুল বলা হয়না। সারা জেলা জুড়ে রয়েছে অনেক
গুলি সাধনপীঠ , সতীর
বলেয়পীঠ ও তবে সেসব গল্প পড়ে। সারা হুগলী জেলায় কালী ক্ষেত্র খুজতে গলে খুব
অদ্ভুত ভাবে চোখে পড়ে এই কালী ক্ষেত্র গুলোর সাথে জড়িয়ে রয়েছে প্রাচীন কিছু ডাকতের
নাম। গল্পে কিংবা ইতিহাসে আমাদের জানা যে ডাকাত রা প্রাচীন কালে শক্তির স্বরূপ মা
কালীর আরাধনা করতো। কাজেই ডাকাত প্রতিষ্টিত কালী স্বাভাবিক । সারা জেলা জুড়ে ছড়িয়ে রয়েছে এমন ডাকাত
দের আরাধ্য কালী ক্ষেত্র। আজ সেই গল্প, ডাকাতে কালীর গল্প।
প্রায় ৫০০ থেকে ৫৫০ বছরের পুরানো এক কালী পুজো।
যে কালীর নাম ই ডাকাতে কালী। সিঙ্গুরের অন্তর্গত, বৈদ্যবাটি তারকেশ্বর রোড এর ধারে
পুরুষোত্তম পুর এলাকায় অবস্থিত এই মন্দির।
এই ডাকাতে কালী মন্দির কে ঘিরে রয়েছে নানা লোকশ্রুতি, নানা
ইতিহাস ,আর অবশ্যই ডাকাত দের গল্প।
সে গল্পে আবার জড়িয়ে আছেন স্বয়ং মা সারদা দেবী।
মন্দিরের সেবাইত দের সাথে আলাপে উঠে এলো এই
নানান কাহিনী।
কথিত কাহিনী এই যে,
অসুস্থ শ্রী রামকৃষ্ণ দেব কে দেখতে কামারপুকুর থেকে
দক্ষিণেশ্বর যাচ্ছেন মা সারদা, সন্ধ্যা তখন নেমে গেছে। হঠাৎ মা এর পথ
আটকায় রঘু ডাকাত ও গগন ডাকাত ও তাদের দলবল,ডাকাতির উদ্দেশ্যে। এই সময় হঠাৎই এই
দুই ডাকাত সদ্দার রক্তচক্ষু মা কালীর মুখ দেখতে পায়। রঘু আর গগণ নিজেদের ভুল বুঝে
সারদা মায়ের কাছে ক্ষমা চান এবং রাত হয়ে যাওয়ার জন্য মা কে সে রাতে তাদের আস্তানায়
থাকার ব্যবস্থা করে দেয় ।
মা সারদা কে তারা রাতে চালভাজা আর কড়াই ভাজা খেতে দেন। কথিত আছে সেই থেকেই নাকি কালী পুজোর দিন চাল ভাজা আর কড়াই ভাজা প্রসাদ দেওয়া হয়। এই মন্দিরের মুর্তি ও রঘু ডাকাত আর গগণ ডাকাতের তৈরী। এই মন্দিরের কালী মূর্তি সেই রক্তচক্ষু কালী মুর্তি।
মা সারদা কে তারা রাতে চালভাজা আর কড়াই ভাজা খেতে দেন। কথিত আছে সেই থেকেই নাকি কালী পুজোর দিন চাল ভাজা আর কড়াই ভাজা প্রসাদ দেওয়া হয়। এই মন্দিরের মুর্তি ও রঘু ডাকাত আর গগণ ডাকাতের তৈরী। এই মন্দিরের কালী মূর্তি সেই রক্তচক্ষু কালী মুর্তি।
গল্প কথা লোককথা যাই হোক সেই প্রচলিত রীতি আজও
একই ভাবে বজায় রয়েছে। প্রথা মেনে কালী পুজোর দিন শুদ্র দের আনা গঙ্গা জল ঘটে দিয়ে
পুজো শুরু হয়।বলি প্রথা আজও আছে মন্দিরে। চারপ্রহরে চারবার পুজো ও ছাগ বলি হয়।
এই মাতৃ মূর্তি দুই ডাকাত
সর্দার প্রতিষ্ঠা করলেও ডাকাতে কালির মন্দির প্রতিষ্ঠা করে স্থানীয়
চালকেবাটি গ্রামের মোড়ল পরিবার। উচুঁ ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত এই মন্দির টি চালা
মন্দির। প্রাচীনকালে টেরাকোটার কাজ থাকলেও আজ প্রায় লুপ্ত প্রায়। মন্দিরের সামনে
রয়েছে নাটমন্দির। তবে এই মন্দিরের সবচেয়ে আকর্ষণীয় গর্ভগৃহের কাঠাল কাঠের দরজা
টি। কারুশিল্প সুন্দর নিদর্শন এই প্রাচীন
দরজা টি।
লোককথা, ঐতিহ্য আর দেব মাহাত্ম্য নিয়ে সিঙ্গুর পুরুষোত্তম পুর এর ডাকতে কালী মন্দির আজও উজ্জ্বল। এই মন্দিরের দেব মাহাত্ম্য এতই স্থানীয় তিনটি গ্রামে এই প্রতিমা ছাড়া অন্য কোন প্রতিমার পুজো তো হয়ইনা, এই এলাকায় কোন বাড়িতে অন্য কোন প্রতিমা মূর্তির ছবিও টাঙানো থাকেনা।
লোককথা, ঐতিহ্য আর দেব মাহাত্ম্য নিয়ে সিঙ্গুর পুরুষোত্তম পুর এর ডাকতে কালী মন্দির আজও উজ্জ্বল। এই মন্দিরের দেব মাহাত্ম্য এতই স্থানীয় তিনটি গ্রামে এই প্রতিমা ছাড়া অন্য কোন প্রতিমার পুজো তো হয়ইনা, এই এলাকায় কোন বাড়িতে অন্য কোন প্রতিমা মূর্তির ছবিও টাঙানো থাকেনা।
হুগলী জেলার মানচিত্রে ডাকাতে কালী এক প্রসিদ্ধ
কালীক্ষেত্র। শুধু কালী পুজো নয় সারা বছরই ভক্ত সমাগমে জমজমাট হয়ে থাকে এই মন্দির
চত্ত্বর ।
হুগলী দর্শন
হুগলী দর্শন