Monday, 10 February 2020

                      প্রাচীন এক পুজোর গল্প
        কোন্নগরের ৩২০ বছরের রাজরাজেশ্বরী পুজো
                                                       



জেলা হুগলী মানেই নানা বৈচিত্র্য আর নানা উৎসবের পীঠস্থান। সারা বছর জুড়ে হুগলী জেলা জুড়ে চলছে নানা উৎসব নানা মেলা। আর এই সব উৎসব মেলা কিংবা পুজো বয়সের দিক থেকে বেশ প্রাচীন। অবিভক্ত বাংলার প্রথম বারোয়ারি সেও এই জেলায়। এমনই এক শতাব্দী প্রাচীন সার্বজনীন , জেলার শ্রীরামপুর মহকুমার অন্তর্গত কোন্নগর এর রাজরাজেশ্বরী পূজা। ৩২০ বছরের পুরানো এই পুজো কেন্দ্র করে স্থানীয় মানুষ তথা আশপাশের এলাকার মানুষ দের মধ্যে উৎসাহ চোখে পড়ার মতো। প্রত্যেক বছর মাঘী পূর্ণিমা তিথি তে মহাসমারোহে পালিত হয় এই রাজরাজেশ্বরী পুজো। পুজো উপলক্ষ্যে চারদিন উৎসবের আবহে মেতে ওঠে কোন্নগর অঞ্চল। পুজো কে কেন্দ্র করে এই চারদিন নানা অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়।  চলে ভোগ বিতরণ, মালসা ভোগের ব্যবস্থাও থাকে। আর রাজরাজেশ্বরী পুজো উপলক্ষ্যে চলে মেলা। পুজো চারদিনের হলেও মেলা চলে একসপ্তাহ ধরে ।


এই পুজোর ইতিহাস কিন্তু বহু প্রাচীন। সেই ইতিহাস জানতে আমাদের ফিরে যেতে হবে তিন শতাব্দী আগের কোন্নগরে।
সপ্তদশ শতকের মাঝামাঝি একসময় কোন্নগর এর বিখ্যাত ঘোষাল পরিবারের এক কর্তার কাছে এক সাধু এসে উপস্থিত হন। সাধু ঘোষাল কর্তা কে গঙ্গাতীরে এক স্থানে নিয়ে যান এবং  জানান যে মা রাজরাজেশ্বরী তাকে স্বপ্ন দেখিয়েছেনগঙ্গা তীর থেকে উঠে এসে তিনি এই স্থানে পূজিত হতে চান।
সাধু ঘোষাল কর্তা কে দেবীর রূপ ও বর্ণনা  করে দেন ।



ঘোষাল কর্তা এই ঘটনা শোনার সাথে সাথে পার্শ্ববর্তী নওপাড়া গ্রামে পন্ডিত দের কাছে লোক পাঠান। নওপাড়া ছিল সেই সময় পন্ডিত অধ্যুষিত। সেখান থেকে শ্রেষ্ঠ পন্ডিত মণ্ডলী সেই মাঠে উপস্থিত হয়ে ঘোষাল কর্তা র কাছে সমস্ত ঘটনা শুনে , দেবী পূজার বিধান দেন। যেদিন পন্ডিত গণ বিধান দেন সেদিন ছিল শ্রীপঞ্চমীর দিন, শাস্ত্র মেনে সেদিন দেবী কাঠামো নির্মান শুরু হয় এবং মাঘী পূর্ণিমা র দিন হয় দেবী পুজো। ১১০৭ বঙ্গাব্দে কোন্নগর এ রাজরাজেশ্বরী পুজোর প্রবর্তন হয়। রীতি মেনে সেই পুজো আজও চলছে।
রাজরাজেশ্বরী বিগ্রহ দেখতে খুবই সুন্দর। দেবীর পদতলে শায়িত মহাদেব, দুই পাশে জয়া বিজয়া, চতুর্ভুজা দেবীর হাতে রয়েছে তীর , ধনুক , বর্জ ও সর্প। কাঠামোর নীচের দিকে ত্রিদেব অর্থাৎ ব্রহ্মা বিষ্ণু মহেশ্বর কে বসা অবস্থায় দে 



পুজো উপলক্ষে মানুষের সমাগম চোখে পড়ার মত।

 শক্তি পুজোর বহু নির্দশন এই জেলা জুড়ে রয়েছে কিন্তু মাঘী পূর্ণিমার এই বিশেষ দিনে ৩২০ বছর ধরে সাড়ম্বরে শক্তি র আরাধনার নিদর্শন এই জেলায় আর নেই। সেই দিক থেকে কোন্নগর এর রাজরাজেশ্বরী অনন্য।
#sumantaboral_er_chobi

হুগলী দর্শন

No comments:

Post a Comment

তেলোভেলোর সারদা: ভীম ডাকাতের রূপান্তরের লোককাহিনি

                            তেলোভেলোর সারদা: ভীম ডাকাতের রূপান্তরের লোককাহিনি হুগলী জেলার আরামবাগ মহকুমার অন্তর্গত মায়াপুর অঞ্চলের তেলোভেলো...