Monday, 27 April 2020


                  অকাল রথযাত্রার গল্প
            ভদ্রেশ্বর তেলেনিপাড়ার অন্নপূর্ণার রথযাত্রা  
                                                              সুমন্ত বড়াল 






 রথ যাত্রা লোকারণ্য মহাধুমধাম
লাইন গুলো শুনলেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে আষাঢ় মাসে মেঘলা এক দিনে দুপুর বেলা ভিড়ে ঠাসা রাস্তার দুধারে মানু‌ষের ঢল। আর রাস্তা দিয়ে চলেছে রথ। আর তাতে সারওয়ার প্রভু জগন্নাথ। আর রথ মানেই মেলা জিলিপি পাপড় ভাজা।
আর হুগলী জেলার রথ মানেই মাহেশ কিংবা গুপ্তিপাড়া।
সেসব তো আষাঢ় এর কথা তবে এই ভরা বৈশাখে রথের কথা কেন ?
আসলে এই বৈশাখে ও যে সেই রথের ধুমধাম আর লোকারণ্য রাস্তা ঘাট , উৎসব মুখর হয়ে ওঠে।
এই অকাল রথযাত্রার স্বাদ নিতে হলে আপনাকে যেতে  হবে হুগলী জেলার ভদ্রেশ্বরের তেলেনীপাড়ায়।
ভদ্রেশ্বরের তেলেনীপাড়া যার গা ঘেঁষে বয়ে গেছে গঙ্গা নদী। গঙ্গা পাড় হলেই শ্যামনগর এর বিখ্যাত আর মূলোজোড়ের কালি বাড়ি। তবে এই তেলেনিপাড়া বিখ্যাত তার অন্নপূর্ণা মন্দিরের জন্য।




 এই অন্নপূর্ণা মন্দির  ২১৮ বছরের পুরানো মন্দির। তেলেনীপাড়ার জমিদার বৈদ্যনাথ বন্দোপাধ্যায় ১২০৮ বঙ্গাব্দের ফাল্গুনী পূর্ণিমায় এই মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন। এই মন্দিরের সাথে জড়িয়ে রয়েছে এই অকাল রথযাত্রা র গল্প। তবে এই বহু প্রাচীন এই মন্দিরের ও জৌলুস কিছু কম নয় ।  মন্দিরটি নবরত্ন এবং দক্ষিণমুখ বিশিষ্ট্য। মন্দিরের সামনে ইউরোপীয় স্থাপত্যের স্তম্ভের ব্যবহার লক্ষনীয়। নবরত্ন মন্দিরের সমতল ছাদ এই মন্দিরের বৈশিষ্ট্য। এই ধরনের ছাদ যুক্ত মন্দির এই জেলায় আরও কয়েকটি আছে। যেমন মহানাদের ব্রম্ভময়ীর মন্দির। এই মন্দিরে কোন পোড়ামাটির অলংকরণ নেই। তবে গর্ভ গৃহের ভিতর  অন্নপূর্ণা মূর্তি সত্য নয়নাভিরাম।  কাঠের সিংহাসনে অষ্টধাতুর দেবী অন্নপূর্ণার বিগ্রহ প্রতিষ্ঠিত। মায়ের ডান হাতে অন্নদান করার হাতা এবং বাম হাতে অন্নপাত্র। দেবীর ডান পাশে রুপোর মহাদেব অবস্থান করছেন। তাঁর বাম হাতে সিঙা ও ডমরু এবং ডান হতে ভিক্ষাপাত্র। এছাড়া সিংহাসনে লক্ষী সরস্বতী এবং নারায়ণ শীলাও রয়েছেন। এখানে দেবীর তন্ত্র মতে পুজো হয় এবং একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য হল মা অন্নপূর্ণার ভোগে প্রতিদিন মাছ দিতেই হবে পাশে তিনটি ঘরে তিনটি শিবলিঙ্গ প্রতিষ্ঠিত। মন্দিরের উঠানে রয়েছে দুটি হাড়ি কাঠ। একটি ছাগ ও একটি মহিষ বলির জন্য। তবে এই বলিপ্রথা বর্তমানে বন্ধ।




 তবে হাড়িকাঠ গুলি অতীতের সাক্ষ্য বহন করে চলেছে। তেলেনীপাড়ার এই মন্দির ইঙ্গ বঙ্গ স্থাপত্য এর এক অপূর্ব নিদর্শন বলা চলে ।
এই মন্দিরেই অনুষ্ঠিত হয় অকাল রথযাত্রা। এই রথযাত্রা উত্সব নিয়ে রয়েছে মজার গল্প দেবী অন্নপূর্ণা নাকি অভিমান করে মন্দির ছেড়ে চলে যান আর লক্ষ্মী নারায়ণ তার অভিমান ভাঙিয়ে তাকে মন্দিরে ফিরিয়ে আনেন।
আদতে প্রাচীন এই রীতির পিছনে রয়েছে এক স্থানীয় উতসবের কথা।
বৈশাখ মাসের অক্ষয় তৃতীয়ার দিন মহাসমারোহে পালিত হয় রথযাত্রা। এই রথ উৎসব কে শিব-অন্নপূর্ণার একশত আটবার গঙ্গাস্নান বলা হয়ে থাকে। এই রথ কে কেন্দ্র করে সকাল থেকেই মাতোয়ারা হয়ে ওঠে স্থানীয় মানুষ জন।




অন্নপূর্ণার রথটি তিনতলা কাঠের রথ , সাথে কাঠের ঘোড়া আর সারথী। অক্ষয় তৃতীয়ার দিন  সকাল বেলা ভক্তরা শিব অন্নপূর্ণা কে রথে করে মন্দির থেকে কিছুটা দুরে স্থানীয় অন্নপূর্ণা বারোয়ারির মোড়ে নিয়ে আসেন। আগে এই রথ গঙ্গার ঘাট পর্যন্ত যেত কিনা বর্তমানে বারোয়ারির মোড় পর্যন্ত যায়। এরপর দুপুর গড়িয়ে বিকেল বেলা শুরু হয় মূল উৎসবভক্তরা চতুর্দলায় লক্ষ্মী নারায়ণ কে নিয়ে কীর্তন  সহযোগে শিব অন্নপূর্ণা কে মন্দিরে ফিরিয়ে আনার জন্য রওনা হয়। তবে সে কীর্তন এও রয়েছে এক অন্য স্বকীয়তা সে কীর্তনে গাওয়া হয় শিব অন্নপূর্ণার কথা ।।
"আনতে শিব অন্নপূর্ণা চল সবে যাই গো ত্বরা,
অবসান হল দিবা উচিত নয় বিলম্ব করা।।
তৃতীয়ার উপলক্ষে, হর গৌরী অন্তরীক্ষে,
রথেতে গঙ্গা সমক্ষে বিরাজিছেন মনোহরা।।
সত্বর পদ সঞ্চারে, চল যাই জাহ্নবী তীরে,
বুঝি মা রেখেছেন হরে হয়ে বিরহ কাতরা।।
ত্যজি দম্ভ গর্বমদ, হেরিগে সেই অভয়পদ,
যে পদ সম্পদপ্রদ সর্বাপদ নাশ করা।।"



সারা তেলেনিপাড়া তখন উৎসবে মাতোয়ারা। স্থানীয় মানুষ জন রাস্তায় বেড়িয়ে রথের দড়িতে টান দেন। এই উৎসবে নারী পুরুষ উচু নীচু সব ভেদ ঘুচে যায় সকলে মিলে রথের রশী তে টান দেন। বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা নামে শিব অন্নপূর্ণা ফেরে তার আপন মন্দিরে। শুরু হয় সন্ধ্যারতি।
তবে উৎসবের এখানে শেষ নয়। উৎসবের রেশ থাকে সন্ধ্যে গড়িয়ে রাত পর্যন্ত।  তার কারণ এই রথযাত্রা কে কেন্দ্র করে স্থানীয় উদয়ন ব্যায়ামাগারের মাঠে বসে মেলা। যে মেলায় নানা বয়েসের নানা মানুষের ঢল নামে। আনন্দ উৎসবের  রেশ নিয়ে রাত নামে। শেষ হয় শিব-অন্নপূর্ণা র রথযাত্রা উৎসব




তেলেনীপাড়ার এই অকাল রথযাত্রা সত্যি কিছুটা অন্যরকম। শতাব্দী প্রাচীন এই উৎসব আজও তার কৌলীন্য বজায় রেখেছে। পারিবারিক মন্দির হওয়া সত্ত্বেও এই মন্দিরের উত্সব কে নিয়ে সকল শ্রেণীর মানুষের উত্সাহ এবং অংশ গ্রহণ চোখে পড়ার মত। এককথায় হুগলী জেলার ভদ্রেশ্বরে র তেলেনীপাড়ার অক্ষয় তৃতীয়া র দিন শিব অন্নপূর্ণা র রথযাত্রা সত্যি যেন মিলন উৎসব

Monday, 13 April 2020


***এক অচেনা গন্তব্যে র দুটি মন্দির এর গল্প ***




জেলার আনাচে কানাচে ঘুরে বেড়ানো র নেশা আমার বহুদিনের। আমার হুগলী জেলা আকারে আর বৈচিত্রে দুই দিক থেকেই সমৃদ্ধ। সুধীর মিত্রের হুগলী জেলা ও বঙ্গসমাজ কিংবা নরেন্দ্রনাথ ভট্টাচার্যের  হুগলী জেলার পুরাকীর্তি এই বই গুলো তে চোখ বলালেই খোঁজ পেয়ে যাই নতুন গন্তব্যের। আর সময় করে গুগল ম্যাপের সাহায্য নিয়ে বেড়িয়ে পড়লেই হল।
এমন ই এক বেড়িয়ে পড়ার গল্প বলবো আজ। আর যে গল্পের সাথে জড়িয়ে আছে একটা ছোটখাটো গ্রাম আর দুটো প্রাচীন মন্দিরের কথা।
শীত তখন শেষের পথে ফ্রেব্রুয়ারির প্রথম দিক। দুপুর গুলো বেস মনোরম। বেড়িয়ে পরলাম গন্তব্যে খুব পরিচিত জনপদ আটপুর। শ্রীরামপুর থেকে সড়ক পথে দূরত্ব প্রায় ৩৬ কিলোমিটার। শিয়াখালা হয়ে অহল্যা বাই রোড ধরে গজারমোড় সেখান থেকে বা দিকে সোজা আঁটপুর।
দুপুরের মিঠে রোদ ,মেঠো গন্ধ, সবুজের সমারোহ, গ্রাম্য মানুষ আর হাইওয়ে। বেস মনোরম। গজার মোড়ে দাঁড়ালাম একটু। চা এ চুমুক ও রাস্তায় আসতে আসতে চোখে পড়ল বনমালী পুরের নবনির্মিত বিশাল দত্তাত্রেয় মন্দির আর শিয়াখালার শতাব্দী প্রাচীন উত্তর বাহিনী।




চা এ চুমুক দিয়ে আবার যাত্রা শুরু গজার মোড় থেকে বাঁদিকে ।কিছুটা গিয়েই হঠাৎ করে তাল কাটলো। দেখি ডানদিকে একটা লাল মোরামে মোড়া রাস্তা চলে গেছে আর রাস্তায় মোড়ে রাজ্য সরাসরি সাইন বোর্ড তাতে লেখা " রাজরাজেশ্বর মন্দির " ডান দিকে। গ্রামের নাম দ্বারহাটা। কোথায় শুনেছি নাম টা। মনে পড়লো সুধীর মিত্রের হুগলী জেলার দেবদেঊল বইতে পড়েছি দ্বারহাটার  দ্বারিকাচনডী র কথা।
আটপুর বাতিল ,গাড়ি ডান দিকে বাক নিল।
ঘড়ির কাটার তখন দুপুর পেরিয়ে বিকাল ছুই ছুঁই। লালা মোড়ামের রাস্তা,  ক্ষেত  খামার, কিছু ছোট খাটো বাড়ি আর একটা বড় পুকুর পেরতোই চোখে পড়ল একটা মন্দিরের চূড়া , কিন্তু অদ্ভুত বিষয় যাওয়ার রাস্তা নেই। উপায় এর সাথে সাথে নানা ভাবনা ভাবছি হঠাৎ হাতে কাটারি নিয়ে এক গ্রাম্য মাঝবয়সী লোক হাজির। আমাকে দেখে দাঁড়ালেন আমি রাস্তা জানতে চাইলে হাত উচুঁ করে দেখিয়ে সে এগিয়ে গেল।  মজার বিষয় উনি যে রাস্তা টা দেখালেন আমি সেটা কে এতক্ষণ একটা মেঠো বাড়ির উঠোন ভাবছিলাম। সেই মেঠো রাস্তা পুকুরে ধার ঘেষে সোজা চলে গেছে মন্দিরের কাছে। কিছুটা গিয়েই চোখে পড়ল গাছ গাছালি তে ঘেরা এক মন্দির। প্রাচীন আটচালা রীতির এক মন্দির। মন্দিরের সামনে অনেক ঘেরা অংশ নাটমন্দির নেই। মন্দিরের সামনে র গেটে ঝুলছে পশ্চিম বঙ্গ সরকারের পুরাতত্ত্ব বিভাগের বোর্ড। যাতে লেখা রাজ রাজেশ্বর মন্দির যার রক্ষণাবেক্ষণ এর ভার  রাজ্য সরকারের।


                           *** রাজরাজেশ্বর মন্দির ***

 মন্দির টি একটু উচুঁ ভিত্তির উপর স্থাপিত। সময়ের সাথে সাথে এই মন্দির ক্ষয়প্রাপ্ত। সরকারি রক্ষণাবেক্ষণ এই মন্দির এখনো টিকে আছে বটে কিন্তু নতুন করে রঙের প্রলেপ পড়ে কৌলীন্য হারিয়েছে। ভিতরে ঢুকে মন্দির টা ভালো করে দেখতে শুরু করলাম, বলা ভালো ছবি তুলতে শুরু করলাম। মন্দির টি একসময় টেরাকোটা র কাজে সমৃদ্ধ ছিল তার কিছু নিদর্শন এখনো রয়েছে। আলাপ হল এই গ্রামের স্থানীয় মানুষ প্রলয় ভট্টাচার্য এর সাথে , তিনি আমায় দেখে এগিয়ে এলেন। মন্দির সম্বন্ধে নানা কথা বলতে লাগলেন। তবে সে সবই  ইতিহাস। তার থেকেই জানা গেল এই রাজরাজেশ্বর মন্দির প্রায় ২৯২ বছরের পুরানো। স্থানীয় জমিদার অপূর্ব মোহন সিংহ রায় এই মন্দিরের প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি গল্পের ছলে বলে যান এই মন্দিরের টেরাকোটার কাজের কথা যার কিছু নিদর্শন রয়েছে।তৎকালীন সময়ে হুগলী জেলার সমাজ চিত্র টেরাকোটার মাধ্যমে এই মন্দিরের গায়ে খোদাই ছিল। মন্দির টি বেশ বড় আকারের আটচালা মন্দির , দৈর্ঘ্য প্রায় 24 ফুট আর প্রস্থ প্রায় ২১ ফুট। ত্রিখিলান যুক্ত প্রবেশদ্বার পেরিয়ে ঢুকতে হয় গর্ভগৃহে।



মন্দিরের সাথে প্রলয় বাবু জানালে এই গ্রামের ইতিহাস। প্রাচীন এই গ্রাম একসময় ছিল ডাচ ও ডেনীয় দের বাণিজ্য কুঠি। এই গ্রাম হুগলী জেলার মহুকুমা সদর ছিল। পরবর্তীতে ইংরেজ রা শ্রীরামপুর অধীগ্রহন করলে ১৮৪৫ সাল থেকে এই গ্রাম শ্রীরামপুর মহকুমার অন্তর্ভুক্ত হয়কথায় কথায় জানতে চাইলাম দ্বারিকাচন্ডী  মন্দিরের কথা। প্রলয় বাবু উৎসাহী হয়ে বললেন হ্যাঁ অবশ্যই দ্বারিকাচন্ডী তো এই গ্রামের প্রাচীন দেবী ওই দেবীর নামেই তো এই গ্রামের নামকরণ। জানতে চাইলাম মন্দির এখান থেকে কতদূর। উনি জানালেন এই কাছেই। তবে আফশোসের সাথে বললেন সেই প্রাচীন মন্দির কালের নিয়মে ভেঙে পড়েছে, স্থানীয় গ্রামবাসী আর পঞ্চায়েত মিলে ভাঙা অংশের উপর নতুন মন্দির প্রতিষ্ঠা করেছে। প্রাচীন টেরাকোটার কাজ ভিতরে কিছু দেখতে পাওয়া যেতে পারে।




প্রলয় বাবু র সাথে গল্পে মশগুল দেখি বিকেল ও শেষের পথে। মাঠ মন্দির চত্বর কচিকাঁচা আর গ্রাম্য মানুষের দখলে। পাশের ঝোপ থেকে ঢেকে চলেছে বসন্তবৌরি। প্রলয় বাবু কে অনুরোধ করলাম সঙ্গ দেওয়ার জন্য। গাড়ি তে স্টার্ট দিয়ে ফিরে দেখলাম রাজরাজেশ্বর মন্দিরের দিকে শেষ বিকালের আলো মন্দির ছুঁয়ে যাচ্ছে, যেন সে বলছে , ‘‘আমি ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে আজ ও দাড়িয়ে আছি থাকবো কালের কাছে হার মেনে বিলীন হওয়া আমায় মানায় না।“
প্রলয় কাকু রাস্তা চিনিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। আসলে বাবু , আপনি আমার আসে না। তাই অল্প আলাপে সম্পর্ক পাতিয়ে ফেলি। রাস্তায় যেতে গিয়ে ঝোপে ঢাকা ছোট্ট মন্দির চোখে পড়ল কাকু বললো বুড়ো শিব, তবে ইতিহাস জানা নেই।
কিছুটা রাস্তা যেতেই দ্বারিকাচন্ডীর মন্দিরে পৌঁছালাম আমরা। সময় তখন গোধূলি। এই মন্দিরের চারপাশে বেশ কিছু বড় বাড়ি রয়েছে। বেশ কয়েকজন এর সাথে পরিচয় হল প্রলয় কাকুর সুবাদে।


                          *** দ্বারিকাচন্ডী মন্দির ***


মন্দিরের ভিতর থেকে তখন শাখ আর ঘণ্টার শব্দ। ভিতরে ঢুকলাম আমরা। বাগান ঘেরা মন্দির। আগেই বলেছি প্রাচীন মন্দির আর নেই। প্রাচীন মন্দিরের অংশ থেকেই এই নবনির্মিত মন্দির। কাজেই প্রাচীন কোন মন্দির শিল্প রীতির নিদর্শন এখানে পাওয়া যায়না। মন্দিরের গায়ে লেখা শকাব্দ ১৬৮৬ অর্থাৎ ১৭৬৪ সালমন্দির নতুন কর নির্মাণ করা হলেও পুরানো মন্দিরের অংশ রয়েছে বলে পুরানো সাল টিকে রাখা রয়েছে। বাগান ঘেরা মন্দিরের রাস্তা পেরিয়ে যখন ভিতরে ঢুকছি তখন মন্দির থেকে কাসর ঘন্টা র শব্দ ভেসে আসছে। সন্ধ্যা আরতি শুরু হয়েছে। মন্দিরের কাছে যেতেই একটা বাচ্চা ছেলে হাতে পঞ্চপ্রদীপ নিয়ে এগিয়ে এলো। এক ভীষণ ভালো লাগার পরিবেশছেলেটির নাম মাণিক। ওর সাথে মন্দির টা ঘুরে দেখলাম কিছুক্ষণ। এরমধ্যে পুজো শেষ হল। প্রলয় কাকু পুরোহিত মশাই এর সাথে আলাপ করিয়ে দিলেন।
ওনার সাথে কথায় কথায় জানতে পারলাম এই দ্বারিকাচন্ডী মন্দিরের নানা গল্প।
এই মন্দির নিয়ে কিংবদন্তি রয়েছে। স্থানীয় সিংহ রায় বংশে জনৈক পূর্ব পুরুষ স্বপ্ন আদেশ পেয়ে দেবী কে পুকুর থেকে তোলেনদেবীর প্রতিষ্ঠা র জন্য একটি মন্দির নির্মাণ করলেও দেবী প্রতিষ্ঠার আগে বেদীতে এক শিয়াল প্রস্রাব করে যায়। সেই মন্দিরে দেবী কে প্রতিষ্ঠা না করে নতুন মন্দির নির্মাণ করা হয়। সেই মন্দিরের ভগ্নাংশের উপর এই মন্দির প্রতিষ্ঠিত।এই মন্দিরার প্রাচীন দেবী মূর্তি ছিল দ্বিভূজা দূর্গা মুর্তি ।তবে বর্তমানে সেই মূর্তি নষ্ট হয়ে গেছে ।  দশ বছর হলো নতুন করে মূর্তি স্থাপন করা হয়েছে , তবে এই মূরতি চতুর্ভুজা ।দেবী সপরিবারে বিরাজ করছেন। মূল পুজো হয় দূর্গাপুজোর সময়।
কথায় কথায় সময় কতটা পেরিয়ে গেল খেয়াল করিনি। হঠাৎ একটা  পেঁচার ডাকে তাল কাটলো।


                          *** দ্বারিকাচন্ডী মাতা ***

ঘড়ির কাটা সাতটার ঘরে। এবার তাহলে ফিরতে হবে। প্রলয় কাকু অনুরোধ করলেন তার বাড়ি যেতে। পরে হবে আশ্বাস দিয়ে ফোন নাম্বার আদান প্রদান করে তাকে বিদায় জানিয়ে রওনা দিলাম। বাইকের হেডলাইট টা যেন অন্ধকার টাকে গাড় করছিল। গজার মোড় পেড়িয়ে হাইওয়ে ধরে বাড়ি ফেরাসেদিনের ঝটিকা সফর অন্য গন্তব্যে পৌঁছে যাওয়া। সব কিছু যত্ন করে গোছানো রইল স্মৃতি তে। আর রাস্তা ধুলো গুলো বাড়ি ফিরে ধুয়ে ফেলেছিলাম বটে কিন্তু  দ্বার হাটা গ্রামের সেই ভালো লাগাটা শরীরে মিশে গেল যা মুছবেনা কোনদিন।


ভক্তের সাথে পথেই বিরাজ করেন " পথের মা "

             ভক্তের সাথে পথেই বিরাজ করেন " পথের মা " গুগুল ম্যাপ পিচ রাস্তা থেকে ঢালাই রাস্তা পেরিয়ে বাড়ির উঠান দিয়ে যে মোড়ে নিয়ে ...