Friday, 21 February 2020


পুনঃজীবন পাওয়া একটি সৌধের গল্প
সুমন্ত বড়াল






             একটা সৌধ কে ঘিরে কত রকম ইতিহাস থাকতে পারেকত রকম ই বা বৈচিত্র্য থাকতে পারে?    এই বৈচিত্রে ভরা ঐতিহাসিক সৌধ টিকে দেখতে হলে আপনাকে আসতে হবে শহর শ্রীরামপুর এর হাওড়া ওয়াটার ওয়ার্কের প্রাঙ্গণে। যার স্থানীয় নাম জলকল। ঝোপঝাড়ে ঢাকা এই অঞ্চলে মাথা উচুঁ করে রয়েছে ষষ্ঠ দশ শতকের এক সৌধ। সরকারি হিসাবে এর নাম " হেনরী ম্যার্টিন প্যাগোডা " আর স্থানীয় দের কাছে জলকল মাঠের ভাঙা মন্দির যা কিনা শ্রীরামপুর শহরের প্রাচীন রাধাবল্লভ জীঊর প্রাচীন মন্দির।
আর এই খানেই সৌধ টির বিশেষত্ব।


এই সৌধের ইতিহাস জানতে আমাদের ফিরে যেতে হবে  ষোড়শ  শতকে। ততকালীন সময়ে জনৈক বৈষ্ণব সাধক  রুদ্র রাম পন্ডিত স্বপ্ন আদেশ পেয়ে , গৌড় এর রাজপ্রাসাদ থেকে বাদশাহ এর হিন্দু প্রধানমন্ত্রীর সহায়তায় একটি শীলা খন্ড আকনা গ্রামে নিয়ে আসেন এবং পুজা শুরু করেন। পরবর্তীতে তিনি এই শিলা খন্ড থেকে বিন্দাবনের শিল্পের দের দিয়ে রাধাবল্লভ জীউর বিগ্রহ নির্মাণ করেন , এবং ১৫৭৭  খ্রীষ্টাব্দে ভক্তদের সহায়তায় একটি আটচালা মন্দির নির্মাণ করেন। সেই থেকে অকনা গ্রামের নাম হয় বল্লভপুর।
স্থানীয় ইতিহাস অনুযায়ী  ১৫৭৭ সালে নির্মিত সেই আটচালাই এই সৌধটি।




ষোড়শ শতকে চালা স্থাপত্যের মন্দির কি ধরণের হত তা এই সৌধ টিকে দেখলে বোঝা যায়। পোড়ামাটির পদ্ম,  কল্পলতার কাজ এই মন্দিরে শোভা পেত। কিন্তু ১৮৬৪ খ্রীষ্টাব্দে প্রবল প্রাকৃতিক দুর্যোগের ফলে মন্দির এর কিছু অংশ ভেঙ্গে পড়লে , রাধাবল্লভ জিঊ  বিগ্রহ নতুন মন্দিরে স্থানান্তরিত করা হয়। অতপর এই বিশাল  পরিত্যক্ত ভগ্ন মন্দির টিকে রেভারেন্ড ডেভিড ব্রাউন ক্রয় করেন এবং স্থানীয় পাদরী হেনরী মার্টিন ১৮০৬ থেকে অবস্থান করেন। তিনি এই মন্দির কে গির্জায় রুপান্তর করেন কিন্তু এর পরবর্তী সময় আশে পাশে অনেক গুলি গির্জা নির্মিত হওয়ায় এই স্থানের গির্জা স্থানান্তরিত হয়। আর এই সৌধটি পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে থেকে। পরিত্যক্ত এই সৌধ তে একসময় মদ তৈরী করা শুরু হয় যে মদ "  প্যাগোডা রাম " নামে খ্যাত ছিল। এই সকল ঘটনা সবই। শতাব্দী প্রাচীন।
তবে  এই মন্দির ভারত সরকারের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের পুরাতত্ত্ব আইনে সংরক্ষিত বলে চিহ্নিত এবং সেখানে লেখা 


"  This building was occupied by the Missionary Henry Martyn ,  1806 "

প্রায় পাঁচশো বছরের কাছাকাছি এই প্রাচীন সৌধটি বহু বছর ধরে পরিত্যক্ত অবস্থায় পরে ছিল। এই সৌধ টিকে ঘিরে এতটাই ঘন জঙ্গল আর ঝোপঝাড় হয়েছিল যে দিনের বেলায় মানুষ জন এই যায়গায় যেতে পারতো না। গঙ্গা তীরে এই সৌধ স্থানীয় মানুষ দের কাছে ভাঙা মন্দির হিসাবে পরিচিত ছিল। কিন্তু বর্তমানে এই মন্দিরের রূপ সম্পুর্ণ বদলে গেছে। ঝোপঝাড় পরিষ্কার করে মন্দির টিকে সম্পুর্ণ রুপে সংষ্কার করা হচ্ছে। ২০১৯ সাল থেকে পশ্চিমবঙ্গ সরকার এর উদ্যোগে এই মন্দিরের সংষ্কার শুরু হয়। আর ২০২০ তে যা সম্পূর্ণ হয়েছে।


এই সময় দাড়িয়ে এই প্রাচীন সৌধ টি তার সমস্ত ইতিহাস নিয়ে দাড়িয়ে আছে দর্শকের জন্য। এই সৌধের প্রতিটি কোণ থেকে যেন ইতিহাস গল্প বলে চলেছে।
আর এক পরিত্যক্ত ভগ্নপ্রায় সৌধকে পুনঃজীবন দেওয়ায় জন্য পশ্চিম বঙ্গ সরকার এর কাছে আমরা সকল শ্রীরামপুর তথা পশ্চিমবঙ্গ বাসী কৃতজ্ঞ ।। 

Monday, 10 February 2020

                      প্রাচীন এক পুজোর গল্প
        কোন্নগরের ৩২০ বছরের রাজরাজেশ্বরী পুজো
                                                       



জেলা হুগলী মানেই নানা বৈচিত্র্য আর নানা উৎসবের পীঠস্থান। সারা বছর জুড়ে হুগলী জেলা জুড়ে চলছে নানা উৎসব নানা মেলা। আর এই সব উৎসব মেলা কিংবা পুজো বয়সের দিক থেকে বেশ প্রাচীন। অবিভক্ত বাংলার প্রথম বারোয়ারি সেও এই জেলায়। এমনই এক শতাব্দী প্রাচীন সার্বজনীন , জেলার শ্রীরামপুর মহকুমার অন্তর্গত কোন্নগর এর রাজরাজেশ্বরী পূজা। ৩২০ বছরের পুরানো এই পুজো কেন্দ্র করে স্থানীয় মানুষ তথা আশপাশের এলাকার মানুষ দের মধ্যে উৎসাহ চোখে পড়ার মতো। প্রত্যেক বছর মাঘী পূর্ণিমা তিথি তে মহাসমারোহে পালিত হয় এই রাজরাজেশ্বরী পুজো। পুজো উপলক্ষ্যে চারদিন উৎসবের আবহে মেতে ওঠে কোন্নগর অঞ্চল। পুজো কে কেন্দ্র করে এই চারদিন নানা অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়।  চলে ভোগ বিতরণ, মালসা ভোগের ব্যবস্থাও থাকে। আর রাজরাজেশ্বরী পুজো উপলক্ষ্যে চলে মেলা। পুজো চারদিনের হলেও মেলা চলে একসপ্তাহ ধরে ।


এই পুজোর ইতিহাস কিন্তু বহু প্রাচীন। সেই ইতিহাস জানতে আমাদের ফিরে যেতে হবে তিন শতাব্দী আগের কোন্নগরে।
সপ্তদশ শতকের মাঝামাঝি একসময় কোন্নগর এর বিখ্যাত ঘোষাল পরিবারের এক কর্তার কাছে এক সাধু এসে উপস্থিত হন। সাধু ঘোষাল কর্তা কে গঙ্গাতীরে এক স্থানে নিয়ে যান এবং  জানান যে মা রাজরাজেশ্বরী তাকে স্বপ্ন দেখিয়েছেনগঙ্গা তীর থেকে উঠে এসে তিনি এই স্থানে পূজিত হতে চান।
সাধু ঘোষাল কর্তা কে দেবীর রূপ ও বর্ণনা  করে দেন ।



ঘোষাল কর্তা এই ঘটনা শোনার সাথে সাথে পার্শ্ববর্তী নওপাড়া গ্রামে পন্ডিত দের কাছে লোক পাঠান। নওপাড়া ছিল সেই সময় পন্ডিত অধ্যুষিত। সেখান থেকে শ্রেষ্ঠ পন্ডিত মণ্ডলী সেই মাঠে উপস্থিত হয়ে ঘোষাল কর্তা র কাছে সমস্ত ঘটনা শুনে , দেবী পূজার বিধান দেন। যেদিন পন্ডিত গণ বিধান দেন সেদিন ছিল শ্রীপঞ্চমীর দিন, শাস্ত্র মেনে সেদিন দেবী কাঠামো নির্মান শুরু হয় এবং মাঘী পূর্ণিমা র দিন হয় দেবী পুজো। ১১০৭ বঙ্গাব্দে কোন্নগর এ রাজরাজেশ্বরী পুজোর প্রবর্তন হয়। রীতি মেনে সেই পুজো আজও চলছে।
রাজরাজেশ্বরী বিগ্রহ দেখতে খুবই সুন্দর। দেবীর পদতলে শায়িত মহাদেব, দুই পাশে জয়া বিজয়া, চতুর্ভুজা দেবীর হাতে রয়েছে তীর , ধনুক , বর্জ ও সর্প। কাঠামোর নীচের দিকে ত্রিদেব অর্থাৎ ব্রহ্মা বিষ্ণু মহেশ্বর কে বসা অবস্থায় দে 



পুজো উপলক্ষে মানুষের সমাগম চোখে পড়ার মত।

 শক্তি পুজোর বহু নির্দশন এই জেলা জুড়ে রয়েছে কিন্তু মাঘী পূর্ণিমার এই বিশেষ দিনে ৩২০ বছর ধরে সাড়ম্বরে শক্তি র আরাধনার নিদর্শন এই জেলায় আর নেই। সেই দিক থেকে কোন্নগর এর রাজরাজেশ্বরী অনন্য।
#sumantaboral_er_chobi

হুগলী দর্শন

ভক্তের সাথে পথেই বিরাজ করেন " পথের মা "

             ভক্তের সাথে পথেই বিরাজ করেন " পথের মা " গুগুল ম্যাপ পিচ রাস্তা থেকে ঢালাই রাস্তা পেরিয়ে বাড়ির উঠান দিয়ে যে মোড়ে নিয়ে ...