দোলে দুর্গোৎসব এর আমেজ
শ্রীরামপুরের মহিষমর্দিনী পুজো
কথায় আছে দোল দুর্গোৎসব । কিন্তু এই দুই উৎসব
একসাথে একই দিনে এও সম্ভব? এমনটাই
হচ্ছে হুগলী জেলার বিখ্যাত শহর শ্রীরামপুরে, তাও এই ঘটনা
কয়েক বছর এর ব্যাপার নয়। সুদীর্ঘ. ২১৫ বছর ধরে চলেছে এই প্রথা।
শহর শ্রীরামপুর এর পঞ্চানন তলা অঞ্চল। যে
পঞ্চানন তলার খুব কাছেই রাধাবল্লভ জীঊ এর মন্দির। সে মন্দিরের কথা অন্য দিন , আজ পঞ্চানন তলার সেই দূর্গাপুজার কথা।
তবে এই দূর্গাপুজা তে দেবী সিংহের উপর সারওয়ার
হয়ে মহিষাসুর বধ করছেন বটে তবে এখানে দেবী সপরিবারে আসেন না। আসেন জয়া বিজয়া কে
সঙ্গে নিয়ে। আর দেবী পুজিত হন মহিষমর্দিনী রূপে।
সাধারণত দোল উৎসব মানেই শ্রীকৃষ্ণ
এর পুজা বৈষ্ণব সম্প্রদায় মানুষের এক বিশেষ দিন , শ্রী চৈতন্য দেবের জন্মতিথি ও বটে , কিন্তু শ্রীরামপুর এর পঞ্চানন তলায় এই
দোল পূর্ণিমার দিন রীতি মেনেই চলে শক্তির আরাধনা।
দোল পূর্ণিমার দিন এমন মহিষমর্দিনী পুজা র
উদাহরন হুগলী জেলায় সম্ভবত আর নেই। জৈষ্ঠ্য মাসে চুঁচুড়া অঞ্চলে মহিষমর্দিনী
পুজার চল আছে কিন্তু দোল পূর্ণিমা তে এই পূজো এই একটিই। সেই দিক থেকে শ্রীরামপুর
এর পঞ্চানন তলার মহিষমর্দিনী পুজো সতন্ত্র ও বটে।
দ্বিশতাধিক বছর পুরানো এই পুজো ঘিরে রয়েছে নানা
লোকশ্রুতি, কিন্তু সেসব কিছুর কোন প্রামাণ্য তথ্য নেই। তবে
এই পুজোর সময় কাল ধরে এগোলে খুব সহজেই অনুমান করা যায় এই পুজো স্থানীয় কোন
পরিবারের পুজো ছিল, পরবর্তীতে যা বারোয়ারি পুজো তে রূপান্তরিত
হয়েছে।
স্থানীয় মানুষ জনের থেকে ও সেই তথ্যই মেলে।
সার্বজনীন এই পুজো পরিচালনা করার জন্য আগে মহিষমর্দিনী র পরিচালন কমিটি থাকলেও
বর্তমানে স্থানীয় টাউন ক্লাব এই পুজো পরিচালনার ভার গ্রহণ করেছে।
প্রচারের আড়ালে থাকা এবং ইতিহাস থেকে বিস্তৃত
হুগলী জেলার এই প্রাচীন পুজো নিয়ে স্থানীয় মানুষের উত্সাহের কোন অভাব নেই।
স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছে এই মহিষমর্দিনী পুজো যেন দুর্গাপুজোর র মতই। আর হবেনা
নাই বা কেন ঢাকের বোলে উৎসব এর সুরই ঘুরপাক
খায় এই অঞ্চলে এই পুজোর চারদিন।
সপ্তমী তিথি তে দেবীর পায়ে আবীর ছুইয়ে শুরু হয় ,
অষ্টমী তিথি তে একশো আট প্রদীপ জ্বেলে দেবীর আরতি, নবমী
তে ভোগ দান এবং দশমী তে বিসর্জন। রীতি মেনে নিষ্ঠা ভরে পূজিত হন দেবী মহিষমর্দিনী।
আগে এই পুজোয় বলি প্রথা প্রচলন থাকলেও বর্তমানে পশুবলি আর হয়না , কিন্তু
পুজো উপলক্ষে বিরাট ভোগের আয়োজন হয় ধুমধাম করে। যাতে অংশ নেন বহু মানুষ।
পুজোর শুরুর দিন টাউন ক্লাবের উদ্যোগে প্রভাত
ফেরীর আয়োজন করা হয়। আবীর মেখে ঢাক এর
তালে দোলের দিন দুর্গোৎসব এর আনন্দে মেতে
উঠে মানুষ জন।
বর্তমানে মহিষমর্দিনীর স্থায়ী একটি মন্দির
রয়েছে। যেটি নতুন করে নির্মিত হয়েছে দেবী মন্দিরের সামনের অংশ টিও আচ্ছাদিত করা
হয়েছে । মন্দিরের
সাথে রয়েছে ভোগের ঘর আর পুজো আয়োজন এর ঘর।
প্রত্যেক বছর দোলের দিন পাথর বাধানো দালানে
মৃন্ময়ী মূর্তি পুজিত হন। এই সময় আলোর মালায় সেজে ওঠে স্থানীয় অঞ্চল।
সবমিলিয়ে দোলে দুর্গোৎসব এর আমেজ নিয়ে শ্রীরামপুরে মহিষমর্দিনী পুজো জমজমাট।
No comments:
Post a Comment