ইনচুড়ার বিষহরির গল্পকথা
ইতিহাস , মধ্যযুগীয় কাব্য এবং লৌকিক দেবদেবী এই জেলার প্রান্তে এসে মিলেমিশে একাকার হয়ে গেছে .. পান্ডুয়া ব্লকের ছোট্ট গ্রাম ইনচুড়া .. পান্ডুয়া থেকে যে রাস্তা পূর্ব বর্ধমান এর কালনা পর্যন্ত চলে গেছে সেই রাস্তায় ছোট্ট গ্রাম ইনচুড়া .. বেহুলা নদীর ধারের এই গ্রাম বহু প্রাচীন ..অতীতে রেনেলের মানচিত্রে এই গ্রামের কথা উল্লেখ আছে .. হাওড়া কাটোয়া শাখার সোমড়া বাজার স্টেশন থেকে এই ইনচুড়া গ্রামে সহজেই পৌঁছে যাওয়া যায় ..
জেলার সদর মহকুমার উত্তর পূর্বে অবস্থিত এই গ্রাম বিখ্যাত তার মা মনসার ঝাপানের জন্য .. মধ্যযুগের মনসা মঙ্গলকাব্য এর আদলে এখানে পূজা অর্চনা হয় .. এই লৌকিক দেব অর্চনার সাথে জড়িয়ে আছে ইতিহাস ও .. মুঘল আমলে নবাবা কর্মচারীরা জরিপের সময় এই বিষহরি মন্দির প্রাঙ্গণে তাবু খাটিয়েছিলেন .. রাতে এক কর্মচারী মা মনসার সবপ্নাদেশ পান , এবং শুরু হয় ইনচুড়ার বিষহরি পুজো .. সেই সময় এই স্থান ছিল জলা ও জঙ্গলে ঢাকা .. পরবর্তীতে বাকুলিয়ার বিখ্যাত জমিদার প্রসন্ন বন্দোপাধ্যায় এর প্রপিতামহ এই স্থানে ঘটা করে বিষহরি মায়ের পুজো শুরু করেন .. ইনচুড়ার এই পুজো প্রায় ৫০০বছরের পুরানো ..
শ্রাবণ মাসের শুক্লপঞ্চমী তে প্রধান পুজো হয় .. পুজোর দিন .. স্থানীয় ১২টি গ্রাম থেকে মানুষ জন মাথায় করে মা মনসার মুর্তি নিয়ে আসেন .. যে মূর্তি গুলি মূল মূর্তির সাথে পুজিত হয় .. একদিনের এই পুজোর পর মূল বিগ্রহ বিসর্জন হয়ে গেলেও এই মূর্তি গুলি একবছর ধরে পুজো হয় .. এই পুজো কে কেন্দ্র করে বহু মানুষ মানত করে পাঠা বলি দেন .. যার সংখ্যা কয়েক হাজার ছাড়িয়ে যায় ..
এই বিষহরি তলার পুজোর আরো এক আকর্ষণ তার মেলা .. স্থানীয় দের কাছে ঝাপানের মেলা হিসাবে পরিচিত এই মেলা সত্যি আকর্ষণীয় . কয়েক কিলোমিটার জুড়ে বিস্তৃত এই মেলা সুসংগঠিত .. এত বড় সুসংগঠিত গ্রামীণ মেলা সত্যি দেখা যায়না .. হরেক কিসমের জিনিষের সাথে চলে কাঠের জিনিষের বেচাকেনা ..
( ঝাপানের মেলা )
মুল পুজো একদিনের হলেও এই মেলা থাকে আরও একসপ্তাহ .. আর মেলা কে কেন্দ্র করে জমজমাট হয় ইনচুড়া গ্রাম ..
বতর্মান এ বিষহরি তলায় একটি নতুন ভাবে গড়ে ওঠা মন্দির রয়েছে .. মন্দিরের গেটে দাতা হিসাবে শ্রী অতুল চট্টোপাধ্যায়ের নাম লেখা ..
প্রাচীনতা ও আধুনিকতার মিলমিশে জেলার দূরপ্রান্তের অবস্থিত এই ছোট্ট গ্রামের লৌকিক দেবী আরাধনা আর গ্রামীণ মেলা বেশ জমজমাট ..
হুগলী দর্শন
বলাগড় ব্লকের আওতায় এই গ্রাম।
ReplyDelete