শতাব্দী প্রাচীন শ্রীধর দামোদর মন্দির
হুগলী জেলা কে যদি বলা হয় মন্দিরময় জেলা তাহলে ভুল
কিছু বলা হয়না .. জেলার প্রত্যেক প্রান্তই মন্দিরে ঘেরা .. একদিকে রাধাবল্লভ ,
জগন্নাথ তো অন্যদিকে আনন্দময়ী , বৃন্দাবন চন্দ
জীউ , আবার অপর দিকে রাধাকান্ত , দূর্গা , ঘণ্টেশ্বর তো আর
একদিকে জটেশবর .. চারিদিক জুড়ে মন্দিরের সমারোহ .. আর এই সব মন্দির এই জেলার
ইতিহাসের সাক্ষী , পুরোকীর্তির বাহক ..
আজ এমন ই এক প্রাচীন , স্থাপত্য এর কথা
বলবো ..
মন্দির এর কথা বলার আগে মন্দির টি যে স্থানে
অবস্থিত সেই যায়গার কথা একটু বলে নেওয়া ভালো .. জেলার পশ্চিম প্রান্তে অবস্থিত এক
প্রাচীন জনপদ , রাঢ় বাংলার
উল্লেখযোগ্য হিন্দু রাজার রাজ্য
ভুরিশ্রেষ্ট বা ভুরশুট এর রাজধানী রাজবহল হাট .. রাজবল্লভী মায়ের নামে নামাঙ্কিত এই যায়গায়র
ইতিহাস বড়ই গৌরবময় , তবে ইতিহাসের সে গৌরব আজ অস্তাচলে । কিন্তু আজ ও এই
জনপদের অলিগলি তে শোনা যায় তাত বোনার শব্দ যা এখানকার ঐতিহ্য । আর অতীত গৌরবের
সাক্ষী এই অঞ্চলের মন্দির গুলি .. রাজবলহাটের রাজবল্লভী মা ভারত বিখ্যাত . সে
মন্দিরের কথা বলছিনা .. আজ বলবো রাজবলহাটেরই প্রায় ২০০বছর পুরানো আর এক মন্দিরের
কথা ..
এই অঞ্চলের শীলপাড়ায় অবস্থিত শ্রীধর দামোদর
মন্দির ।
১৭২৪ খ্রীষ্টাব্দে স্থানীয় শীল বংশের পূর্বপুরুষ শ্রী লম্বোদর শীল এই মন্দির
নির্মাণ করেন ।
প্রাচীন এই আটচালা মন্দির নির্মাণ শৈলীর দিক থেকে বিশেষত্বর দাবী না রাখলেও এই
মন্দিরের অলংকরণ গুলি বিশেষত্বর দাবী রাখে , নিম্নভিত্তির উপর স্থাপিত এই মন্দির
টেরাকোটায় অলঙ্কৃত ।
ফুল , লতা পাতা , দেবদেবীর
পোড়ামাটির কাজ এই মন্দির কে সুন্দর করে তুলেছে .. মন্দিরের গায়ে মন্দির নির্মাণের
সাল শকাব্দে লেখা রয়েছে , শকাব্দ ১৬৪৬ .. তবে এই মন্দিরের গর্ভগৃহে কোন বিগ্রহ পুজিত হয়না ..
শ্রীধর দামোদর জিউ এই মন্দিরে শীলা রূপে পুজিত হন ।
তবে আক্ষেপের বিষয় এই যে মন্দির টি প্রাচীনতা
এবং নোনা ধরে যাওয়ার কারণে বর্তমানে মানে রঙ করা হয়েছে .. সঠিক রক্ষানাবেক্ষণ এর
অভাবে যেভাবে অনেক মন্দির তার কৌলীন্য হারাচ্ছে এটা তার ব্যতিক্রম নয় .. তবে এই
রঙের জন্য মন্দিরের শিল্প সুষমা একটু নষ্ট হলেও মন্দির টি রক্ষা পেয়েছে ..
এই মন্দির লাগোয়া শীল বংশের একটি দূর্গা মন্দির
ও রয়েছে .. সবমিলিয়ে প্রাচীনতা আর বতর্মান সময়ের মিলমিশে শ্রীধর দামোদর মন্দির
মন্দ না ..
হাওড়া তারকেশ্বর রেলপথে হরিপাল স্টেশনে নেমে
বাসে রাজবলহাট পৌঁছতে পারেন , আর সড়ক পরে ডানকুনি চাপাডাঙ্গা অহল্যা
বাই রোড ধরে শিয়াখালা মোড় থেকে ফুরফুরা জাঙ্গীপাড়া হয়ে নয়ত গজার মোড় থেকে আটপুর
হয়ে রাজবলহাট পৌঁছে যেতে পারেন .. এই দুই রাস্তা কিন্তু ইতিহাস সমৃদ্ধ প্রাচীন স্থাপত্যে ভরা ..
No comments:
Post a Comment