ছবি ঘরে চা এ চুমুক
কিছু শহর , মফস্বল ,
কিংবা গ্রাম , অজান্তেই বড় প্রিয় হয়ে ওঠে ।যদি কারণ
জানতে চাওয়া হয় তাহলে বলতে হয় অকারণেই ভালো লাগে। ভালো লাগে বলেই হয়তো
এমন এক প্রিয় রাস্তা আছে যে কালো রাস্তা টা
কয়েকটা শহর মফস্বল কে ছুঁয়ে চলে গেছে অনেক
দুর । এই রাস্তায় এসে পড়লে মনে হয় যেন আপনজনের কাছে চলে এলাম । তবে আজ এই রাস্তার
গল্প নয় ,সেই রাস্তা যেখানে আমার প্রিয় জেলা টাকে ছেড়ে প্রতিবেশী হয়ে গেছে সেই
প্রান্তের কাছে ছোট্ট মফস্বল এর এই রাস্তার উপর একটা দোকান কে নিয়ে। আজকের গল্প
একটা চায়ের দোকান ।
হ্যাঁ চায়ের দোকান ,
এস টি কে কে রোড চলতি কথায় আসাম রোড ধরে আপনি
চলছেন ত্রিবেণী থেকে কালনার দিকে .. একে একে কুন্তীনদী , জিরাট , শ্রীপুর
, সোমড়া পেরিয়ে যাচ্ছেন ডান হাতে রেল লাইন .. আর সবুজ ক্ষেত চেরা কালো
রাস্তা কে সাক্ষী রেখে আপনি এগিয়ে চলেছেন ।কোড়লা পেরিয়ে রাস্তা এঁকে বেঁকে গেছে তারপর মড়া নদী বেহুলা
পার করে আপনি বেহুলা স্টেশন যাওয়ার রাস্তা র মোড়ে এসে একটু থামুন ।
অনেক টা রাস্তা এলেন এবার একটু চায়ে চুমুক দিয়ে
জিরিয়ে নিন ।
হ্যাঁ আজকের গল্পের গন্তব্য সেই চায়ের দোকান ।
(চা খোর মানুষের সাথে বিপদ মন্ডল ডানদিনে হাসি মুখে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষ টি)
বিপদ মন্ডলের চায়ের দোকান । মনে হতে পারে
সবকিছু ছেড়ে চায়ের দোকান কেন , আসলে
স্বাদ বদল কিংবা একটু জিরিয়ে নেওয়া আরকি ।
এই আসাম রোডে যাতায়াত করছি বেশ কিছু বছর তবে এই দোকানের সাথে আলাপ বেশ নাটকীয় ভাবে ।
মাসটা কার্ত্তিক ,আমরা ফিরছি
কালনার দিক থেকে । হেমন্তের হালকা হাওয়া আর সদ্য নামা অন্ধকার। সান্ধ্যকালীন চা না
হলে চলে ? গাড়িতে আমরা তখন ছয় জন । সবচেয়ে প্রবীণ মানুষ টি গাড়ি দাঁড় কারাতে
বললেন চায়ের দোকান দেখে । গাড়ি থেকে নেমে
প্রথম চমক টা লেগেছিল সেদিন ,
এটা চায়ের দোকান নাকি ছবি ঘর ।
একটা চায়ের দোকান তবে আর পাঁচটা চায়ের দোকানের
থেকে এটা কোথায় যেন আলাদা ।সেদিন সদ্য নামা সন্ধ্যে আর এইমাত্র জ্বলে ওঠা টিউব
লাইটের আলোয় দোকান টা চমকে দিল । দোকানে ঢুকতেই ডানদিকে চা বানানোর সরঞ্জাম ,
বয়ামে রাখা বিস্কুট আর চা বানাচ্ছেন বিপদ মণ্ডল ।আর দোকানের বাঁ দিকে
? চমক টা ওখানেই বাঁদিকের পুরো
দেওয়াল জুড়ে কাঁচের শোকেস আর তার মধ্যে সাজানো মনীষী দের ছবি ।
সেদিন তাড়া ছিল চমক টা নিয়ে ফিরে এসেছিলাম আবার আসতেই হবে এটা প্রতিজ্ঞা করে।
আসাম রোডে আমার যাতায়াত একটু বেশী কারণ টা
ব্যক্তিগত ভালো লাগা ।
তাই কিছু দিনের মধ্যে আবার হাজির হলাম সেই
দোকানে । এবার সকালবেলায় দিনের স্পষ্ট আলোয় ।
প্রসঙ্গত বলে রাখি এই চায়ের দোকানে আমি যখন ই
চা খাই দুকাপ খাই ।চায়ের দাম সম্পর্কে বলি যে চা টা আমাদের শহরাঞ্চলে কিংবা বেহুলা
গুপ্তিপাড়ার অন্য দোকানে পাঁচ টাকা নেয় , সেটা বিপদ মন্ডলের দোকানে তিন টাকা
।তাই হয়ত এই দোকানে পাতা বেঞ্চ গুলো সর্বদা ভরা ।তবে চা এর গল্প তো না দোকানের
গল্প ফেরা যাক সেই কথায় ।
সেদিন সন্ধ্যেতে আমার দেখায় কিছু ভুল ছিল শুধু
মনীষী রা স্থান পেয়েছেন এমন না , এদেশের নানা ক্ষেত্রের বিখ্যাত মানুষ এর স্থান এই
দোকানের শোকেসে । সেটা রাজনীতি থেকে স্বাধীনতা সংগ্রামী , খেলা থেকে
রাজনীতি কিংবা সিনেমা সব বিখ্যাত মানুষের ছবি হাজির । বাদ জাননি সাহিত্যিকেরা ও ।এই
হুগলী জেলার এক প্রান্তিক মফস্বল এর এক ছোট্ট চাওয়ালা যে ঠিক কি বার্তা দিচ্ছেন ,
অত জটিলতায় কাজ নেই .
তবে তার এই উদ্যোগ সত্যি অভিনবত্বের দাবী রাখে
। আপনি হয়ত বহু নামি দামী কফি শপে ঝাঁ চকচকে সাজানো গোছানো পেয়ালা তে চুমুক
দিয়েছেন কিন্তু মফস্বলের এই ছোট্ট চায়ের
দোকান টার মতো সাজ গোজ দেখেছেন কি ?
আর ছবি গুলো কিন্তু যাইহোক ভাবে রাখা নেই
রীতিমতো ফ্রেমে বাঁধাই করে শোকেস বন্দী ।
বিপদ দা কে প্রশ্ন করে ছিলাম কি ব্যাপার এটা ?
সোজা সরল উত্তর
"ভালো লাগে তাই " ..
এই দোকান বোধহয় এমন এক যায়গা যেখানে ডান ,
বাম সবাই একসাথে বিরাজ করেন ।
বহুবার ওই দোকান টায় গেছি এমন ও হয়েছে যাওয়ার কথা ছিল অন্য গন্তব্যে চলে
গেছি বিপদ দার দোকানে ।
ছবি ঘরে চা এ চুমুক দিতে । বাইরে থেকে আপাত
বৈচিত্র্য হীন কিন্তু ভিতরে আপনাকে চমক দেবেই ।
আসাম রোড ধরে বেহুলা নদী পেরলে অবশ্যই থামতে
ভুলবেন না ।ট্রেনে আসুন হাওড়া কাটোয়া লাইনে বেহুলা স্টেশন এ নেমে এস টি কে কে রোড
(আসাম রোড ) দিকে হাঁটলে রাস্তার সংযোগ স্থলে খেলার মাঠের পাশে এই ছবি ঘর ।
চুপি চুপি বলি ধন্যিমেয়ে ছায়াছবির বৈরাগী কে
মনে আছে , এই চায়ের দোকানে চলে আসুন চাওয়ালার সাথে কোথাও একটা মিল পেয়ে যাবেন
।।
No comments:
Post a Comment