Monday, 4 November 2019


  রাজবাড়ির ঠাকুর দালান থেকে সাধারণ মানুষের অঙ্গনে প্রথম পুজোর গল্প
                              
                        প্রথম বারোয়ারী পুজোর গল্প  




হুগলী জেলার এক প্রসিদ্ধ জনপদ গুপ্তিপাড়া। মুকুন্দ রাম চক্রবর্তী র চন্ডীমঙ্গল কাব্যে এই জনপদের উল্লেখ পাওয়া যায়।
এই গুপ্তিপাড়া প্রসিদ্ধ তার রথ উৎসব কে কেন্দ্র করে।
তবে এই গুপ্তিপাড়া,  ইতিহাস কিংবা বলা যেতে পারে সমগ্র বাংলার ইতিহাসে এই জনপদ এর নাম স্বর্ণাক্ষরে লিখে রেখেছেন এই জনপদের ১২ জন ব্রাহ্মণ । ১২ জন বন্ধু অর্থাৎ বারো ইয়ার। আজ সারা বঙ্গে বারোযারী পুজোর রমরমা নানা শিল্প সুষমায় সেজে সে পুজো আজ বিশ্ব ব্যাপী। কিন্তু আজ থেকে ২৬০ বছর আগে এই গুপ্তিপাড়া ১২ জন ব্রাহ্মণ যুবক মিলে প্রথম রাজবাড়ীর ঠাকুর দালান থেকে সাধারণ মানুষের মধ্যে নিয়ে এলো উৎসব কে। উৎসব তো সকলের রাজা বা জমিদারের আঙিনায় তা বন্দী থাকবে কেন? আজ থেকে ২৬০ বছর আগে যেন এক বিপ্লব ঘটিয়েছিলেন এই বারো ইয়ার।
কথিত আছে গুপ্তিপাড়া অঞ্চলের কিছু মহিলা স্থানীয় জমিদার বাড়িতে দূর্গাপুজা দেখতে গিয়ে অপমানিত হন, বাড়ি ফিরে তারা সে কথা জানালে সেই বাড়ির ছেলেরা নিজেদের উদ্যোগে পুজো করার সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু দুর্গাপূজা তো তখন হয়ে গেছে তাই কার্ত্তিক মাসের শুক্ল নবমী  তারা পূজা আয়োজন করে।




শুরু হয় অবিভক্ত বাঙলার প্রথম যৌথ উদ্যোগে পুজো যা রাজবাড়ির আঙিনায় নয় বরং সাধারণ এর উঠানে যার লৌকিক নাম বারোয়ারী পুজা।
দেবীর নাম হয় বিন্ধ্য বাসিনী। সেই থেকে আজও গুপ্তিপাড়ার বিন্ধ্যবাসিনী তলা তে সাড়ম্বরে পালিত হয় এই পুজো ।
তৎকালীন বিভিন্ন পত্রিকায় এই ঘটনার উল্লেখ করা হয়।
সেই সময় স্থানীয় ব্রাহ্মণ রা  বারোজন কে নির্বাচিত করে একটি কমিটি গঠন করেন ।যারা বাংলার সম্ভ্রান্ত পরিবারের কাছ থেকে সেই সময় ৭০০০ হাজার টাকা চাঁদা সংগ্রহ করে।
এই বিষয়ে শ্রীরামপুর থেকে প্রকাশিত "ফ্রেন্ডস অব ইন্ডিয়া " পত্রিকায় ১৮২০ সালে একটি খবর প্রকাশিত হয়। যাতে লেখা হয়।
"  A new species of puja which has been introduced into Bengal within the last thirty years called barowaree, About thirty year's ago at Guptipara near Santipoora a twon celebrated in Bengal for it's numerous colleges a number Brahmans formed on association for the celebration of puja independently of the rules of shastra "
অর্থাৎ এই পত্রিকার প্রকাশিত খবর অনুযায়ী এই পুজা শুরু ১৭৯০ সালে , ক্যালকাটা রিভিউ পত্রিকা এই মত গ্রহণ করেছে তবে সাল নিয়ে ভিন্ন মত রয়েছে। বিন্ধ্যবাসীনি তলা নিবাসী উষানাথ মুখোপাধ্যায় মহাশয় এই পুজোর দ্বিতীয় বর্ষের পুজোর একটি ফর্দ খুঁজে পান। যে ফর্দের কথা শ্রী বিনয় ঘোষ তার পশ্চিম বঙ্গের সংস্কৃতি গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন (পাতা ৪৭৭ ২ সংষ্করন) । যে ফর্দের উল্লেখিত সাল বাংলার ১১৬৭ সন অর্থাৎ ১৭৬০ সাল।


সেই মতে এই পুজোর ২৬০ বছরের। যে সাল মেনে বর্তমানে এই পুজা হচ্ছে .
 শোনা যায় সেই সময় ব্রাহ্মণ রা ছোট ছোট দলে ভাগ হয়ে বিভিন্ন জেলায় চাঁদা সংগ্রহ করতে যেতেন। ক্রমে এই বারোয়ারী পুজা জনপ্রিয় হয়ে ওঠে এবং সমগ্র বাংলায় ছড়িয়ে পড়ে। গুপ্তিপাড়ার বারোয়ারির সাথে শান্তিপুরের বারোয়ারির প্রতিযোগিতা র কৌতুক চিত্র কালীপ্রসন্ন সিংহ এর " হুতোম পেঁচা র নকসা " তেও পাওয়া যায়।
জমিদার বাড়ি অলিন্দ থেকে সার্বজনীন আঙিনায় উৎসব কে নিয়ে আসার ২৬০ বছরের গৌরব নিয়ে আজও সাড়ম্বরে পালিত হয়ে চলেছে গুপ্তিপাড়ার বিন্ধ্যবাসিনী পুজো।

Friday, 18 October 2019


    রঘু ডাকাত আর গগণ ডাকাতের রক্তচক্ষু কালী     
                ( সিঙ্গুরের ডাকাতে কালী )
   
                                                     সুমন্ত বড়াল








হুগলী জেলার কালীক্ষেত্র সন্ধানে বেড়িয়ে কিছুটা ঘাবড়ে যাওয়ার দশা। কালী কলকাত্তা ওয়ালী না বলে যদি কালী হুগলীওয়ালী বলি তাহলে কিছু ভুল বলা হয়না।  সারা জেলা জুড়ে রয়েছে অনেক গুলি সাধনপীঠ , সতীর বলেয়পীঠ ও তবে সেসব গল্প পড়ে।   সারা হুগলী জেলায় কালী ক্ষেত্র খুজতে গলে খুব অদ্ভুত ভাবে চোখে পড়ে এই কালী ক্ষেত্র গুলোর সাথে জড়িয়ে রয়েছে প্রাচীন কিছু ডাকতের নাম। গল্পে কিংবা ইতিহাসে আমাদের জানা যে ডাকাত রা প্রাচীন কালে শক্তির স্বরূপ মা কালীর আরাধনা করতো। কাজেই ডাকাত প্রতিষ্টিত কালী স্বাভাবিক সারা জেলা জুড়ে ছড়িয়ে রয়েছে এমন ডাকাত দের আরাধ্য কালী ক্ষেত্র। আজ সেই গল্প, ডাকাতে কালীর গল্প।


প্রায় ৫০০ থেকে ৫৫০ বছরের পুরানো এক কালী পুজো। যে কালীর নাম ই ডাকাতে কালী। সিঙ্গুরের অন্তর্গত,  বৈদ্যবাটি তারকেশ্বর রোড এর ধারে পুরুষোত্তম পুর এলাকায় অবস্থিত এই মন্দির।  এই ডাকাতে কালী মন্দির কে ঘিরে রয়েছে নানা লোকশ্রুতি, নানা ইতিহাস ,আর অবশ্যই ডাকাত দের গল্প।  সে গল্পে আবার জড়িয়ে আছেন স্বয়ং মা সারদা দেবী।
মন্দিরের সেবাইত দের সাথে আলাপে উঠে এলো এই নানান কাহিনী।
কথিত কাহিনী এই যে, 
অসুস্থ শ্রী রামকৃষ্ণ দেব কে দেখতে কামারপুকুর থেকে দক্ষিণেশ্বর যাচ্ছেন মা সারদা, সন্ধ্যা তখন নেমে গেছে। হঠাৎ মা এর পথ আটকায় রঘু ডাকাত ও গগন ডাকাত ও তাদের দলবল,ডাকাতির উদ্দেশ্যে। এই সময় হঠাৎই এই দুই ডাকাত সদ্দার রক্তচক্ষু মা কালীর মুখ দেখতে পায়। রঘু আর গগণ নিজেদের ভুল বুঝে সারদা মায়ের কাছে ক্ষমা চান এবং রাত হয়ে যাওয়ার জন্য মা কে সে রাতে তাদের আস্তানায় থাকার ব্যবস্থা করে দেয় । 



মা সারদা কে তারা রাতে চালভাজা আর কড়াই ভাজা খেতে দেন। কথিত আছে সেই থেকেই নাকি কালী পুজোর দিন চাল ভাজা আর কড়াই ভাজা প্রসাদ দেওয়া হয়। এই মন্দিরের মুর্তি ও রঘু ডাকাত আর গগণ ডাকাতের তৈরী। এই মন্দিরের কালী মূর্তি সেই রক্তচক্ষু কালী মুর্তি। 
গল্প কথা লোককথা যাই হোক সেই প্রচলিত রীতি আজও একই ভাবে বজায় রয়েছে। প্রথা মেনে কালী পুজোর দিন শুদ্র দের আনা গঙ্গা জল ঘটে দিয়ে পুজো শুরু হয়।বলি প্রথা আজও আছে মন্দিরে। চারপ্রহরে চারবার পুজো ও ছাগ বলি হয়।
এই মাতৃ  মূর্তি দুই ডাকাত সর্দার প্রতিষ্ঠা করলেও ডাকাতে  কালির মন্দির প্রতিষ্ঠা করে স্থানীয় চালকেবাটি গ্রামের মোড়ল পরিবার। উচুঁ ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত এই মন্দির টি চালা মন্দির। প্রাচীনকালে টেরাকোটার কাজ থাকলেও আজ প্রায় লুপ্ত প্রায়। মন্দিরের সামনে রয়েছে নাটমন্দির। তবে এই মন্দিরের সবচেয়ে আকর্ষণীয় গর্ভগৃহের কাঠাল কাঠের দরজা টি।  কারুশিল্প সুন্দর নিদর্শন এই প্রাচীন দরজা টি



লোককথা, ঐতিহ্য আর দেব মাহাত্ম্য নিয়ে সিঙ্গুর পুরুষোত্তম পুর এর ডাকতে কালী মন্দির আজও উজ্জ্বল। এই মন্দিরের দেব মাহাত্ম্য এতই স্থানীয় তিনটি গ্রামে এই প্রতিমা ছাড়া অন্য কোন প্রতিমার পুজো তো হয়ইনা,  এই এলাকায় কোন বাড়িতে অন্য কোন প্রতিমা মূর্তির ছবিও টাঙানো থাকেনা। 
হুগলী জেলার মানচিত্রে ডাকাতে কালী এক প্রসিদ্ধ কালীক্ষেত্র। শুধু কালী পুজো নয় সারা বছরই ভক্ত সমাগমে জমজমাট হয়ে থাকে এই মন্দির চত্ত্বর ।

হুগলী দর্শন

Wednesday, 2 October 2019


     প্রাচীনতা যেখানে বনেদীয়ানায় ঝলমলিয়ে ওঠে 
                           ( শ্রীরামপুরের দে বাড়ি)

       
                                   

বনেদী বাড়ির পুজো বলতেই প্রথমেই যে ছবি গুলো মাথায় আসে,একটা বিশাল ঠাকুর দালান তাতে ঝলমলে সাজে অনেক মানুষ। তাদের কথার তালে সুরে মুখরিত চত্বর, ঝাড়বাতি, ঢাকের বাদ্যি, আর পুরো চত্বর আলো করে থাকা এক‌টি সুসজ্জিত প্রতিমা। আর ধুনোর ধোঁয়ায় ভরে যাওয়া ঠাকুর দালান। 
এই পুরো ছবিটা হুবহু মিলে যাবে আপনি যদি পুজোর মধ্যে চলে আসেন শহর শ্রীরামপুরের দে বাড়িতে।  শহর টাকে যখন আপাদমস্তক মুড়ে ফেলছে আধুনিকতা সেই সময় দাড়িয়ে দে বাড়ি তাদের ঐতিহ্য কে নিখুঁত ভাবে বজায় রেখে দিয়েছে।
এ বাড়ির পুরানো থেকে আধুনিক প্রজন্ম সকলেই সামিল হন এই পুজোয়।  পুজোর পাঁচটা দিন দে বাড়ির ঠাকুর দালান যেন সব পেয়েছি র আসর।
এই দে বাড়ির সাথে আমার যোগাযোগ বহু বছরের। আমি নিজেও এই শহরের লোক। দে বাড়ির নতুন প্রজন্মের মানুষ সৌম্যদীপ দে(টুকাই) । এই লেখার বিষয়ে  বলতেই কি আগ্রহ তার। অবলীলায় সে বলতে শুরু করলো তাদের পুজোর ইতিহাস। আসলে শ্রীরামপুর এর দে বাড়ির এটাই নিউক্লিয়াস। পুরানো হোক বা নতুন সব প্রজন্মই তাদের শিকড় টা ভোলেনি।
এই দে বাড়ি জুড়ে রয়েছে প্রায় তিনশো বছরের ইতিহাস। পুরানো শ্রীরামপুর এর সাক্ষ্য বহন করে চলছে এই দে বাড়ি। 



রাম চন্দ্র দে র আমল থেকে এই দে বাড়ির প্রতিপত্তির শুরু। পেশায় ব্যবসায়ী রামচন্দ্র ছিলেন নুনের ব্যবসায়ী। এই ব্যবসায় তিনি প্রতিপত্তি অর্জন তিনি যে সেই সময় ব্যবসায়ী হিসাবে খ্যাতি অর্জন করেছিলেন তা বলার অপেক্ষা রাখেনা।রামচন্দ্র দে মহাশয় সেই সময় শহরের একজন ধার্মিক মানুষ হিসাবে পরিচিত ছিলেন । বাংলার ১২৩০ সনে তিনি পরলোকগমণ করলে তাঁর স্ত্রী তাঁর সাথে সহমরণে যান , শহর শ্রীরামপুরে এটি ছিল শেষ সতীপ্রথা ।
 রামচন্দ্র দের তৈরি ঠাকুর দালান কিংবা দে বাড়ি প্রাচীন স্থাপত্য শৈলীর সাক্ষ্য বহন করে চলে।  বাড়িটি কালের নিয়মে ভগ্নপ্রায় তবে ঠাকুর দালান এখনও একই রকম। বাড়ির কিছুটা অংশে এখন একটি স্কুল ও রয়েছে। এই দে পরিবারের নিজস্ব একটি গঙ্গার ঘাট ও রয়েছে। জনশ্রুতি এও রয়েছে অতীতে নাকি দে বাড়ি ভিতর দিয়ে ঘাট পর্যন্ত একটি রাস্তা ছিল, বাড়ির মহিলাদের গঙ্গা স্নানে যাওয়ার জন্য ছিল এই ব্যবস্থা।
 লোকশ্রুতি ,ইতিহাস, গল্প এসব অতীত কিন্তু আজও দে বাড়ির বৈভবের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে তাদের ঠাকুর দালান আর, দুর্গাপূজা।
প্রথা মেনে রথ থেকেই দে বাড়িতে উৎসবের মেজাজ। রথে কাঠামো পুজোর মধ্যে দিয়ে পুজোর সূচনা । তবে এই পরিবারের কূল দেবতা শ্রীধর জিঊ। সব পুজোর আগেই তার পুজো বাধ্যতামূলক। কাঠামো পুজার পর ঠাকুর দালানেই স্থানীয় চাতরা অঞ্চলের  মৃৎশিল্পী রা ঠাকুর গড়া শুরু করেন।  মহলয়া তিথিতে দেবীপক্ষের সূচনায় হয়ে চক্ষুদান।  এই চক্ষু দান পর্বটি ও দেখার মত।



ষষ্ঠী তে দেবীর আনুষ্ঠানিক বোধন হয় ঠিকই তবে পঞ্চমী থেকেই আলোর রোশনাই আর মানুষের সমাগম এ ভরে ওঠে দে বাড়ি। 
এই বাড়ির পুজায় বলি দান প্রথার চল নেই। এই বাড়িতে অন্নভোগের প্রথা ও নেই। বাড়ির প্রবীণা সদস্যা শ্রীমত্যা বিজয়া দে জানান, যেহেতু এটা ব্রাহ্মণ বাড়ির পুজো নয় তাই অন্নভোগ হয়না। 




শীতল ভোগ, নানা পদের মিষ্টি, নাড়ু দিয়েই চলে ঘরের মেয়ে রসনা তৃপ্তি । দে বাড়ির পুজোর কয়েক টি ব্যাপার সত্যি মন ছুঁয়ে যায় প্রথম,  এই বাড়ির সন্ধি পুজোর প্রদীপ জ্বালানো । প্রদীপের আলোয় ভরে যায় ঠাকুর দালান চত্বর । আর সবচেয়ে আকর্ষণীয় এই বাড়ির বিসর্জন পর্ব।
দশমীর দিন দুপুরে শুরু হয় ঘরের মেয়ে উমার বিদায় পর্ব। মূর্তি কে মূল মঞ্চ থেকে নামিয়ে ঠাকুর দালানের মাঝখানে রাখা হয়। তারপর শুরু হয় বরণ পর্ব। দে পরিবারের যতজন এয়ো স্ত্রী রয়েছেন সকলে সালংকারা বেশে দেবীকে প্রদক্ষিণ করে বরণ শুরু




 করেন। এরপর সিঁদুর খেলা আর ধুনুচী নাচ। কয়েক ঘণ্টা ধরে চলে এই অনুষ্ঠান। এই কয়েক ঘণ্টা সত্যি মনোমুগ্ধকর। পরিবারের লোক, স্থানীয় মানুষ ছাড়া দূরদুরান্ত থেকে মানুষ ভিড় জমান এই দিন। ফ্লাস বালব এর ঝলকানি , ঢাকের আওয়াজ, শঙ্খ উলু সব মিলিয়ে অদ্ভুত ঘোর লেগে যায়। আর এই রেশ মেখে দেবী চলেন বিসর্জনে। দে পরিবারের নিজস্ব নামাঙ্কিত ঘাটে প্রতিমা নিরঞ্জন হয়। তবে এই বাড়িতে কোজাগরী লক্ষ্মী পুজা হয়না ওই দিন কুলদেবতা শ্রীধর জিঊ র পুজো হয়।



সাবেকিয়ানায় মোড়া। সোনার অলংকার, রুপোর মুকুট আর অস্ত্রে সজ্জিত দেবী মূর্তি। আর আলোক উজ্জ্বল বিশাল ঠাকুর দালান সবমিলিয়ে আধুনিক সাজে প্রাচীন ইতিহাস এর রূপ দেখতে হলে অবশ্যই গন্তব্য হবে শ্রীরামপুরের ২৭০ বছরের দে বাড়ির পুজো।


হুগলী দর্শন

Friday, 27 September 2019

                                              বড় বাড়ির বড় পুজো 
                                             
                                                 < জিরাটের ফকির চাঁদ চক্রবর্তীর পুজো >                                              





তখন সময় সপ্তদশ শতাব্দীর শেষভাগ এই জেলার পরিচিত জনপদ জিরাট তখন খুর্দ্দেশা আমিন মহম্মদপুর নামে খ্যাত। এই মহম্মদ পুর তখন শেওড়াফুলির দশ আনি রাজার অধীন।  সেই সময় এই মহম্মপুরে এলেন যশোরের পন্ডিত রামেশ্বর বিদ্যারত্নের পুত্র পন্ডিত অভয়রাম সার্বভৌম। আজ সেই অভয়রাম সার্বভৌম এর বংশের গল্প সেই বংশের দুর্গাপূজা র গল্প।
অভমরাম যখন মহম্মদপুর অধুনা  জিরাটে আসেন তখন তার বয়স সত্তর। রাজপরিবারের সাথে সুসম্পর্ক থাকার ফলে দশ আনির রাজা অভয়রাম কে পাঁচশো বিঘা জমি দান করেন। তিনি এরপর নিজ বসত বাড়ি নির্মাণ করেন আর বাড়ির সামনে শ্রী শ্রী মৃন্ময়ী কালী ঠাকুরানির মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন। পরবর্তী কালে অভয়রামের পুত্র শ্রীকৃষ্ণ এই বংশের খ্যাতি বিস্তার ঘটান। শ্রীকৃষ্ণ এর ন্যায় শাস্ত্রের অসাধারণ দক্ষতার জন্য মুঘল সম্রাট আওরঙ্গজেব তাকে 'চক্রবর্তী 'উপাধি তে ভূষিত করেন। এরপর থেকেই এই বংশে পরিবর্তন এর ছোঁয়া লাগে শ্রীকৃষ্ণ এর দুই পুত্র বিষ্ণু রাম ও মুকুন্দরাম অধ্যাপনা কিনবা শাস্ত্রচর্চার পেশা ছেড়ে ব্যবসা করতে শুরু করেন। পুর্তগীজ দের সাথে বানিজ্য করে মুকুন্দরাম প্রতিপত্তি করেন। তিনি প্রতিষ্ঠা করলেন পাষাণময়ী কালী মন্দির।


তবে অভয়রাম এর বংশের সর্বাপেক্ষা খ্যাতি প্রতিপত্তি নাম হল, বিষ্ণুরাম এর পুত্র ফকির চাঁদ চক্রবর্তীর সময়। ফকির চাঁদের সময়কাল এই বংশের সবর্ণ যুগ বলা যায়।  কলকাতার বিখ্যাত "টমাস দ্য সুজা " ঝাড়লন্ঠণ কোম্পানির প্রধান বেনিয়ান হিসাবে তিনি এতটাই খ্যাতি অর্জন করলেন যে তার জীবিত কালেই কলকাতার গড়নহাটা অঞ্চলে একটি রাস্তা তার নামে নামকরণ করা হয়।
এই ফকিরচাঁদ নিজের বসতবাড়ি অঞ্চলে ও নানা নির্মাণ করতে শুরু করলেন । ১৭৬৩ তে তিনি প্রতিষ্টা করলেন জোড়া শিবমন্দির যা আজও জিরাটের ল্যান্ডমার্ক।
১৭৯৭ সালে ফকির চাঁদই প্রথম চক্রবর্তী বংশে দুর্গা পূজা সূচনা করলেন। ২২২ বাইশ বছরের পুরানো ফকির চন্দ্রের সেই পুজো আজ পরিচিত জিরাটের বড়বাড়ির পুজো নামে। জেলার
প্রাচীন এই পুজোয় রয়েছে নিজস্ব কিছু বৈশিষ্ট্য ও পারিবারিক কিছু রীতি। রীতি মেনে জন্মাষ্টমী তে কাঠামো পুজোর মধ্যে দিয়ে শুরু হয় বড় বাড়ির পুজো। পাটুলির পাল বংশের মৃৎশিল্পীরা বংশপরম্পরায় এই বাড়ির মূর্তি তৈরী করে আসছেন।







বাড়িটি কালের নিয়মে কিছু পরিবর্তন হলেও খিলান যুক্ত ঠাকুর দালান আজও আছে। এই ঠাকুর দালানেই চলে মূর্তি তৈরী থেকে পুজা অর্চনা। ঠাকুর দালান টি বেশ নজর কারে। ষষ্ঠী তে মৃন্ময়ী কালি মন্দিরে পুজোর পরে হয় দেবীর বোধন। চক্রবর্তী দের বড়বাড়ির পুজো তে ঢাকের আওয়াজ শোনা যায়না প্রাচীনকাল থেকে ঢোলের তালে মায়ের পুজো হয়। পুজোর চারদিন ভোগ শীতল নৈবেদ্য তে চলে পুজা তবে বলি প্রথা র চল এখানে নেই।





এইসব এর মধ্যে বড়বাড়ির পুজো তে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য দিক হলো তার বিসর্জন। এই বড়বাড়ির ই প্রতিবেশী আমার বন্ধু বিক্রম জিত মুখার্জী র আমন্ত্রণে সেই বিসর্জন পর্ব দেখা র সুযোগ হয়।  বিক্রম এর কাছেই এই বাড়ির সব গল্প শোনা। আর এই বাড়ি সম্বন্ধে আগ্রহ জন্মায় ওর কথা শুনে।  যাইহোক আসি বিসর্জন পর্বে। ।



দশমীর দিন পান্তা ভাত,  কচুর শাক এবং চালতার চাটনি দিয়ে হয় দেবীর ভোগ তারপর বিকালে বেহারা কাধে দেবী মুর্তি বিসর্জনে র উদ্দেশ্যে রওনা হয়। প্রচলিত রীতি মেনে আগে জোড়া নৌকায় বসিয়ে গঙ্গায় দেবী বির্সজন হত তবে বর্তমানে একটি নৌকা করে মাঝগঙ্গায় বিসর্জন করা হয়। বিসর্জন উপলক্ষে স্থানীয় মানুষের উৎসাহ চোখে পড়ার মত।




ইতিহাস আধুনিকতা কিনবা প্রাচীনতা মাখা ঠাকুর দালান মফস্বল এর শান্ত পরিবেশ আর চক্রবর্তী বাড়ির মাতৃ মূর্তির মুগ্ধ করা রূপ । সবমিলিয়ে জিরাটের বড়বাড়ির পুজো জমজমাট।

( ছবি ও লেখা - সুমন্ত বড়াল )
হুগলী দর্শন

Saturday, 21 September 2019

                ব্যাস্ত রাস্তার পাশে মোঘল আমলের মন্দির 




নানা বৈচিত্র্যে ভরা আমাদের এই জেলা .. এই জেলার শহর থেকে গ্রামের অলিগলি তে ছড়িয়ে রয়েছে নানান প্রাচীন ঐতিহাসিক নিদর্শন .. আপনি ধরুন ব্যাস্ত শহরের ব্যস্ত কোন রাস্তা দিয়ে যাচ্ছেন আপনি হয়ত খেয়াল করেন নি কিংবা খেয়াল করেও শুধু মাত্র একটা মন্দির ভেবে এড়িয়ে গেছেন .. আপনি জানতেই পারলেন না আপনি আনুমানিক ৪০০ বছর পুরানো মোঘল আমলে তৈরী কোন প্রাচীন মন্দির মিস করে গেলেন .. হ্যাঁ হতেই পারে এমন ..
জেলার সদর শহরের ব্যস্ত তম খড়োবাজার অঞ্চলে নেতাজি সুভাষ রোডে রয়েছে এমন ই এক মন্দির .. সম্রাট আকবরের একজন জায়গীরদার ছিলেন জিতেন রায় , ইনি ছিলেন চুচড়া অঞ্চলের জায়গীরদার .. সম্রাট আকবরের রাজস্বসচিব টোডরমল্ল জিতেন রায় কে চুঁচুড়া অঞ্চলের জায়গীরদার হিসেবে নিযুক্ত করেন।এই জিতেন রায় নির্মিত মন্দির দয়াময়ী কালীমন্দির নামে পরিচিত 


..

  আনুমানিক ৪০০ বছর পুরানো এই মন্দিরের বেশ কয়েকটি বৈশিষ্ঠ্য চোখেপড়ে । এই মন্দিরের কোন নাট মন্দির নেই ..  মূল মন্দিরটি গম্বুজ আকৃতির চূড়াবিশিষ্ট এই মন্দিরে অনেক টা যায়গা জুড়ে রয়েছে বাধানো প্রাঙ্গন ..আর চারটি শিব মন্দির ..এই মন্দিরের দেবী মূর্তি ও একটু অন্যরকম 
মাতৃ মূর্তির মুখায়ব কিছুটা লম্বাটে , কষ্ঠিপাথরের এই দেবী মূর্তির জিহ্বা টি সোনার ..




দেবীমন্দিরের বাইরে রয়েছে ঘেরা বারান্দা . ভক্তগণ যে বারান্দায় দেবী আরাধনায় মগ্ন থাকেন ..
বতর্মানে স্থানীয় পৌরসভার উদ্যোগ মন্দির ও মন্দির চতবর সংষ্কার ও সৌন্দর্যায়ন করা হয়েছে ..
< ছবি ও তথ্য - সুমন্ত বড়াল >

হুগলী দর্শন

Saturday, 31 August 2019













                
                 শতাব্দী প্রাচীন শ্রীধর দামোদর মন্দির 


হুগলী জেলা কে যদি বলা হয় মন্দিরময় জেলা তাহলে ভুল কিছু বলা হয়না .. জেলার প্রত্যেক প্রান্তই মন্দিরে ঘেরা .. একদিকে রাধাবল্লভ , জগন্নাথ তো অন্যদিকে আনন্দময়ী , বৃন্দাবন চন্দ জীউ , আবার অপর দিকে রাধাকান্ত , দূর্গা , ঘণ্টেশ্বর তো আর একদিকে জটেশবর .. চারিদিক জুড়ে মন্দিরের সমারোহ .. আর এই সব মন্দির এই জেলার ইতিহাসের সাক্ষী , পুরোকীর্তির বাহক ..
আজ এমন ই এক প্রাচীন , স্থাপত্য এর কথা বলবো ..
মন্দির এর কথা বলার আগে মন্দির টি যে স্থানে অবস্থিত সেই যায়গার কথা একটু বলে নেওয়া ভালো .. জেলার পশ্চিম প্রান্তে অবস্থিত এক প্রাচীন জনপদ , রাঢ় বাংলার  উল্লেখযোগ্য হিন্দু রাজার রাজ্য  ভুরিশ্রেষ্ট বা ভুরশুট এর রাজধানী রাজবহল হাট ..  রাজবল্লভী মায়ের নামে নামাঙ্কিত এই যায়গায়র ইতিহাস বড়ই গৌরবময় , তবে ইতিহাসের সে গৌরব আজ অস্তাচলেকিন্তু আজ ও এই জনপদের অলিগলি তে শোনা যায় তাত বোনার শব্দ যা এখানকার ঐতিহ্য আর অতীত গৌরবের সাক্ষী এই অঞ্চলের মন্দির গুলি .. রাজবলহাটের রাজবল্লভী মা ভারত বিখ্যাত . সে মন্দিরের কথা বলছিনা .. আজ বলবো রাজবলহাটেরই প্রায় ২০০বছর পুরানো আর এক মন্দিরের কথা ..
এই অঞ্চলের শীলপাড়ায় অবস্থিত শ্রীধর দামোদর মন্দির ১৭২৪ খ্রীষ্টাব্দে স্থানীয় শীল বংশের পূর্বপুরুষ শ্রী লম্বোদর শীল এই মন্দির নির্মাণ করেন প্রাচীন এই আটচালা মন্দির নির্মাণ শৈলীর দিক থেকে বিশেষত্বর দাবী না রাখলেও এই মন্দিরের অলংকরণ গুলি বিশেষত্বর দাবী রাখে , নিম্নভিত্তির উপর স্থাপিত এই মন্দির টেরাকোটায় অলঙ্কৃত ।
ফুল , লতা পাতা , দেবদেবীর পোড়ামাটির কাজ এই মন্দির কে সুন্দর করে তুলেছে .. মন্দিরের গায়ে মন্দির নির্মাণের সাল শকাব্দে লেখা রয়েছে , শকাব্দ ১৬৪৬ .. তবে  এই মন্দিরের গর্ভগৃহে কোন বিগ্রহ পুজিত হয়না .. শ্রীধর দামোদর জিউ এই মন্দিরে শীলা রূপে পুজিত হন



তবে আক্ষেপের বিষয় এই যে মন্দির টি প্রাচীনতা এবং নোনা ধরে যাওয়ার কারণে বর্তমানে মানে রঙ করা হয়েছে .. সঠিক রক্ষানাবেক্ষণ এর অভাবে যেভাবে অনেক মন্দির তার কৌলীন্য হারাচ্ছে এটা তার ব্যতিক্রম নয় .. তবে এই রঙের জন্য মন্দিরের শিল্প সুষমা একটু নষ্ট হলেও মন্দির টি রক্ষা পেয়েছে ..
এই মন্দির লাগোয়া শীল বংশের একটি দূর্গা মন্দির ও রয়েছে .. সবমিলিয়ে প্রাচীনতা আর বতর্মান সময়ের মিলমিশে শ্রীধর দামোদর মন্দির মন্দ না ..
হাওড়া তারকেশ্বর রেলপথে হরিপাল স্টেশনে নেমে বাসে রাজবলহাট পৌঁছতে পারেন , আর সড়ক পরে ডানকুনি চাপাডাঙ্গা অহল্যা বাই রোড ধরে শিয়াখালা মোড় থেকে ফুরফুরা জাঙ্গীপাড়া হয়ে নয়ত গজার মোড় থেকে আটপুর হয়ে রাজবলহাট পৌঁছে যেতে পারেন .. এই দুই রাস্তা কিন্তু ইতিহাস সমৃদ্ধ  প্রাচীন স্থাপত্যে ভরা ..


Monday, 26 August 2019


                                       ছবি ঘরে চা এ চুমুক



কিছু শহর , মফস্বল , কিংবা গ্রাম , অজান্তেই বড় প্রিয় হয়ে ওঠে ।যদি কারণ জানতে চাওয়া হয় তাহলে বলতে হয় অকারণেই ভালো লাগে। ভালো লাগে বলেই হয়তো 
এমন এক প্রিয় রাস্তা আছে যে কালো রাস্তা টা কয়েকটা শহর মফস্বল কে ছুঁয়ে চলে গেছে  অনেক দুর । এই রাস্তায় এসে পড়লে মনে হয় যেন আপনজনের কাছে চলে এলাম । তবে আজ এই রাস্তার গল্প নয় ,সেই রাস্তা যেখানে আমার প্রিয় জেলা টাকে ছেড়ে প্রতিবেশী হয়ে গেছে সেই প্রান্তের কাছে ছোট্ট মফস্বল এর এই রাস্তার উপর একটা দোকান কে নিয়ে। আজকের গল্প
একটা চায়ের দোকান ।
হ্যাঁ চায়ের দোকান ,
এস টি কে কে রোড চলতি কথায় আসাম রোড ধরে আপনি চলছেন ত্রিবেণী থেকে কালনার দিকে .. একে একে কুন্তীনদী , জিরাট , শ্রীপুর , সোমড়া পেরিয়ে যাচ্ছেন ডান হাতে রেল লাইন .. আর সবুজ ক্ষেত চেরা কালো রাস্তা কে সাক্ষী রেখে আপনি এগিয়ে চলেছেন ।কোড়লা পেরিয়ে   রাস্তা এঁকে বেঁকে গেছে তারপর মড়া নদী বেহুলা পার করে আপনি বেহুলা স্টেশন যাওয়ার রাস্তা র মোড়ে এসে একটু থামুন ।
অনেক টা রাস্তা এলেন এবার একটু চায়ে চুমুক দিয়ে জিরিয়ে নিন ।
হ্যাঁ আজকের গল্পের গন্তব্য  সেই চায়ের দোকান ।


 (চা খোর মানুষের সাথে বিপদ মন্ডল ডানদিনে হাসি মুখে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষ টি)

বিপদ মন্ডলের চায়ের দোকান । মনে হতে পারে সবকিছু ছেড়ে চায়ের দোকান কেন ,  আসলে স্বাদ বদল কিংবা একটু জিরিয়ে নেওয়া আরকি ।
এই আসাম রোডে যাতায়াত করছি বেশ কিছু বছর  তবে এই দোকানের সাথে আলাপ বেশ নাটকীয় ভাবে ।
মাসটা কার্ত্তিক ,আমরা ফিরছি কালনার দিক থেকে । হেমন্তের হালকা হাওয়া আর সদ্য নামা অন্ধকার। সান্ধ্যকালীন চা না হলে চলে ? গাড়িতে আমরা তখন ছয় জন । সবচেয়ে প্রবীণ মানুষ টি গাড়ি দাঁড় কারাতে বললেন  চায়ের দোকান দেখে । গাড়ি থেকে নেমে প্রথম চমক টা লেগেছিল সেদিন ,
এটা চায়ের দোকান নাকি ছবি ঘর ।
একটা চায়ের দোকান তবে আর পাঁচটা চায়ের দোকানের থেকে এটা কোথায় যেন আলাদা ।সেদিন সদ্য নামা সন্ধ্যে আর এইমাত্র জ্বলে ওঠা টিউব লাইটের আলোয় দোকান টা চমকে দিল । দোকানে ঢুকতেই ডানদিকে চা বানানোর সরঞ্জাম , বয়ামে রাখা বিস্কুট আর চা বানাচ্ছেন বিপদ মণ্ডল ।আর দোকানের বাঁ দিকে ? চমক টা ওখানেই  বাঁদিকের পুরো দেওয়াল জুড়ে কাঁচের শোকেস আর তার মধ্যে সাজানো মনীষী দের ছবি ।
সেদিন তাড়া ছিল চমক টা নিয়ে ফিরে এসেছিলাম  আবার আসতেই হবে এটা প্রতিজ্ঞা করে।
আসাম রোডে আমার যাতায়াত একটু বেশী কারণ টা ব্যক্তিগত ভালো লাগা ।
তাই কিছু দিনের মধ্যে আবার হাজির হলাম সেই দোকানে । এবার সকালবেলায় দিনের স্পষ্ট আলোয় ।
প্রসঙ্গত বলে রাখি এই চায়ের দোকানে আমি যখন ই চা খাই দুকাপ খাই ।চায়ের দাম সম্পর্কে বলি যে চা টা আমাদের শহরাঞ্চলে কিংবা বেহুলা গুপ্তিপাড়ার অন্য দোকানে পাঁচ টাকা নেয় , সেটা বিপদ মন্ডলের দোকানে তিন টাকা ।তাই হয়ত এই দোকানে পাতা বেঞ্চ গুলো সর্বদা ভরা ।তবে চা এর গল্প তো না দোকানের গল্প ফেরা যাক সেই কথায় ।
সেদিন সন্ধ্যেতে আমার দেখায় কিছু ভুল ছিল শুধু মনীষী রা স্থান পেয়েছেন এমন না , এদেশের  নানা ক্ষেত্রের বিখ্যাত মানুষ এর স্থান এই দোকানের শোকেসে । সেটা রাজনীতি থেকে স্বাধীনতা সংগ্রামী , খেলা থেকে রাজনীতি কিংবা সিনেমা সব বিখ্যাত মানুষের ছবি হাজির । বাদ জাননি সাহিত্যিকেরা ও ।এই হুগলী জেলার এক প্রান্তিক মফস্বল এর এক ছোট্ট চাওয়ালা যে ঠিক কি বার্তা দিচ্ছেন , অত জটিলতায় কাজ নেই .
তবে তার এই উদ্যোগ সত্যি অভিনবত্বের দাবী রাখে । আপনি হয়ত বহু নামি দামী কফি শপে ঝাঁ চকচকে সাজানো গোছানো পেয়ালা তে চুমুক দিয়েছেন  কিন্তু মফস্বলের এই ছোট্ট চায়ের দোকান টার মতো সাজ গোজ দেখেছেন কি ?




আর ছবি গুলো কিন্তু যাইহোক ভাবে রাখা নেই রীতিমতো ফ্রেমে বাঁধাই করে শোকেস বন্দী ।
বিপদ দা কে প্রশ্ন করে ছিলাম কি ব্যাপার এটা ? সোজা সরল উত্তর
"ভালো লাগে তাই " ..
এই দোকান বোধহয় এমন এক যায়গা যেখানে ডান , বাম সবাই একসাথে বিরাজ করেন ।
বহুবার ওই দোকান টায় গেছি  এমন ও হয়েছে যাওয়ার কথা ছিল অন্য গন্তব্যে চলে গেছি বিপদ দার দোকানে ।
ছবি ঘরে চা এ চুমুক দিতে । বাইরে থেকে আপাত বৈচিত্র্য হীন কিন্তু ভিতরে আপনাকে চমক দেবেই ।
আসাম রোড ধরে বেহুলা নদী পেরলে অবশ্যই থামতে ভুলবেন না ।ট্রেনে আসুন হাওড়া কাটোয়া লাইনে বেহুলা স্টেশন এ নেমে এস টি কে কে রোড (আসাম রোড ) দিকে হাঁটলে রাস্তার সংযোগ স্থলে খেলার মাঠের পাশে এই ছবি ঘর ।
চুপি চুপি বলি ধন্যিমেয়ে ছায়াছবির বৈরাগী কে মনে আছে , এই চায়ের দোকানে চলে আসুন চাওয়ালার সাথে কোথাও একটা মিল পেয়ে যাবেন ।।

ভক্তের সাথে পথেই বিরাজ করেন " পথের মা "

             ভক্তের সাথে পথেই বিরাজ করেন " পথের মা " গুগুল ম্যাপ পিচ রাস্তা থেকে ঢালাই রাস্তা পেরিয়ে বাড়ির উঠান দিয়ে যে মোড়ে নিয়ে ...