Saturday, 31 August 2019
Monday, 26 August 2019
ছবি ঘরে চা এ চুমুক
Thursday, 15 August 2019
আগষ্ট
১৫ মানেই ভারতের স্বাধীনতা দিবস। প্রত্যেক ভারতীয় কাছে এ এক
আবেগের দিন স্মরণীয় দিন .. আমরা যারা হুগলী জেলার বাসিন্দা তারও ব্যতিক্রম নই .. তবে এই ১৫আগস্ট হুগলী
জেলার জন্য আরও এক ঘটনার জন্যও চিরস্মরণীয় .. তবে সেই
ঘটনা ১৯৪৭ সালের ১৫আগষ্টের নয় তার থেকে ৯৩
বছর আগের কথা .. অর্থাৎ আজ থেকে ১৬৬ বছর আগের ১৫ই আগষ্ট ..
আজ
সেই ঘটনার গল্প বলবো ..
আজ
থেকে ১৬৬ বছর আগে ১৮৫৪ সালের ১৫ই আগষ্ট বাংলার মানুষ সাক্ষী ছিল এক অভূতপূর্ব
ঘটনার , যে
ঘটনা বাংলার মানুষের দৈনন্দিন যাতায়াতের ভাবনা টাকেই বদলে দিয়েছিল । সেদিন বাংলার মানুষ প্রথম দেখল একটি
যান। যার গতিবেগ এর জন্য মানুষ তাকে " পাগলা হাতি " আর আদর করে যাকে
ডাকত " কলের গাড়ি " হ্যাঁ রেলগাড়ি । বাংলার বুকে প্রথম আনুষ্ঠানিক ভাবে
রেল চলাচল শুরু আজকের দিনেই অর্থাৎ ১৫আগষ্ট । আর এর সাথে হুগলীর কি সম্পর্ক? প্রথম রেল চলেছিল বাংলার হাওড়া থেকে হুগলী স্টেশন এর মধ্যে । আরো গুরুত্ব পূর্ণ বিষয় বাংলার প্রথম ট্রেনটি যে চারটি স্টেশনে এ থেমেছিল তার মধ্যে তিনটি হুগলী জেলার অন্তর্গত .. শ্রীরামপুর .
চন্দননগর ও হুগলী ।
১৮৫৪ এর ১৫ই আগষ্টের সেই ট্রেন এ সফর করার জন্য
প্রায় তিন হাজার মানুষ আবেদন করেন কিন্তু সুযোগ পেয়েছিল মাত্র কয়েকশো জন . ১৫ই
আগষ্ট. ১৮৫৪ দিনটি
ছিল মঙ্গলবার । প্রথম যে ট্রেন চলবে সেই ট্রেনে চ গার্ডের
কামরা ছাড়া ছিল তিনটি প্রথম শ্রেণী , দুটি দ্বিতীয় শ্রেণী ও তিনটি তৃতীয়
শ্রেণীর কামরা । সকাল
সাড়ে আটটায় ট্রেনটির শুভ সূচনা হয় । যাত্রা শুরু করে নয়টা চল্লিশ নাগাদ ট্রেন টি হুগলী স্টেশন পৌঁছায় । ততকালীন সময় হাওড়া থেকে হুগলীর ভাড়া ছিল ,
![]() |
Add caption |
প্রথম
শ্রেণী ৩টাকা ,
দ্বিতীয়
শ্রেণী ১টাকা ২আনা ,
তৃতীয়
শ্রেণী ৭ আনা ..
তবে এদেশে রেলের সূচনা পর্ব আরও পুরানো ।ইংরেজ
ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ১৮৪৯ থেকে এদেশে
রেলওয়ে কোম্পানির সাথে চুক্তি বদ্ধ হয় . তারপর শুরু হয় জমি অধিগ্রহণ ও রেললাইন
পাতার কাজ . কোম্পানীর এই মহৎ উদ্যোগে প্রিন্স
দবারকানাথ ঠাকুরের এক বড় ভুমিকা ছিল , তিনি বাংলায় রেলপথ এর কাজের জন্য মূল ধনের এক তৃতীয়াংশ জোগাড় করে
দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিলে কাজে গতি আসে ..
তবে লাইন পাতার কাজে বিলম্ব হয় । কারণ রেল লাইন এর কিছুটা অংশ চন্দননগর এর উপর দিয়ে
যাচ্ছিল , আর চন্দননগর ছিল সেই সময় ফরাসী উপনিবেশ । ইংরেজ ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী ও ফারাসী
সরকারের মধ্যে এই টালবাহানা না হলে হয়ত ভারতের প্রথম ট্রেন এই বাংলায় চলত।
পরবর্তী
তে ফরাসি সরকারের অনুমোদন পেলে হাওড়া থেকে পান্ডুয়া পর্যন্ত রেল লাইন পাতা হয়। ১৮৫৪ এর ৬ জুলাই পান্ডুয়া পর্যন্ত
পরীক্ষা মূলক ট্রেন চালানো হয়।
তৎকালীন “বেঙ্গল হরকরা” কাগজে পরদিন ইংরেজি তে খবর ছাপা হয় যার তর্জমা করলে এইরকম দাঁড়ায় -
“ গতকাল সকাল ৭ টা ৪০ মিনিটে হাওড়ায় এক
বিশাল সমাবেশ হয়েছিল। প্রথম পরীক্ষামূলক
ট্রিপে যাত্রীবাহী ট্রেনের সাথে এটি লোকোমোটিভ এর চলাচল শুরু দেখতে..”
কিন্তু
১৫ আগস্ট প্রথম যাত্রায় ট্রেন চলল হাওড়া থেকে হুগলী পর্যন্ত ।
Wednesday, 14 August 2019
ঝুলন যাত্রা ও শ্রীরামপুরের তিনমন্দির
Monday, 12 August 2019
ইনচুড়ার বিষহরির গল্পকথা
ইতিহাস , মধ্যযুগীয় কাব্য এবং লৌকিক দেবদেবী এই জেলার প্রান্তে এসে মিলেমিশে একাকার হয়ে গেছে .. পান্ডুয়া ব্লকের ছোট্ট গ্রাম ইনচুড়া .. পান্ডুয়া থেকে যে রাস্তা পূর্ব বর্ধমান এর কালনা পর্যন্ত চলে গেছে সেই রাস্তায় ছোট্ট গ্রাম ইনচুড়া .. বেহুলা নদীর ধারের এই গ্রাম বহু প্রাচীন ..অতীতে রেনেলের মানচিত্রে এই গ্রামের কথা উল্লেখ আছে .. হাওড়া কাটোয়া শাখার সোমড়া বাজার স্টেশন থেকে এই ইনচুড়া গ্রামে সহজেই পৌঁছে যাওয়া যায় ..
জেলার সদর মহকুমার উত্তর পূর্বে অবস্থিত এই গ্রাম বিখ্যাত তার মা মনসার ঝাপানের জন্য .. মধ্যযুগের মনসা মঙ্গলকাব্য এর আদলে এখানে পূজা অর্চনা হয় .. এই লৌকিক দেব অর্চনার সাথে জড়িয়ে আছে ইতিহাস ও .. মুঘল আমলে নবাবা কর্মচারীরা জরিপের সময় এই বিষহরি মন্দির প্রাঙ্গণে তাবু খাটিয়েছিলেন .. রাতে এক কর্মচারী মা মনসার সবপ্নাদেশ পান , এবং শুরু হয় ইনচুড়ার বিষহরি পুজো .. সেই সময় এই স্থান ছিল জলা ও জঙ্গলে ঢাকা .. পরবর্তীতে বাকুলিয়ার বিখ্যাত জমিদার প্রসন্ন বন্দোপাধ্যায় এর প্রপিতামহ এই স্থানে ঘটা করে বিষহরি মায়ের পুজো শুরু করেন .. ইনচুড়ার এই পুজো প্রায় ৫০০বছরের পুরানো ..
শ্রাবণ মাসের শুক্লপঞ্চমী তে প্রধান পুজো হয় .. পুজোর দিন .. স্থানীয় ১২টি গ্রাম থেকে মানুষ জন মাথায় করে মা মনসার মুর্তি নিয়ে আসেন .. যে মূর্তি গুলি মূল মূর্তির সাথে পুজিত হয় .. একদিনের এই পুজোর পর মূল বিগ্রহ বিসর্জন হয়ে গেলেও এই মূর্তি গুলি একবছর ধরে পুজো হয় .. এই পুজো কে কেন্দ্র করে বহু মানুষ মানত করে পাঠা বলি দেন .. যার সংখ্যা কয়েক হাজার ছাড়িয়ে যায় ..
এই বিষহরি তলার পুজোর আরো এক আকর্ষণ তার মেলা .. স্থানীয় দের কাছে ঝাপানের মেলা হিসাবে পরিচিত এই মেলা সত্যি আকর্ষণীয় . কয়েক কিলোমিটার জুড়ে বিস্তৃত এই মেলা সুসংগঠিত .. এত বড় সুসংগঠিত গ্রামীণ মেলা সত্যি দেখা যায়না .. হরেক কিসমের জিনিষের সাথে চলে কাঠের জিনিষের বেচাকেনা ..
( ঝাপানের মেলা )
মুল পুজো একদিনের হলেও এই মেলা থাকে আরও একসপ্তাহ .. আর মেলা কে কেন্দ্র করে জমজমাট হয় ইনচুড়া গ্রাম ..
বতর্মান এ বিষহরি তলায় একটি নতুন ভাবে গড়ে ওঠা মন্দির রয়েছে .. মন্দিরের গেটে দাতা হিসাবে শ্রী অতুল চট্টোপাধ্যায়ের নাম লেখা ..
প্রাচীনতা ও আধুনিকতার মিলমিশে জেলার দূরপ্রান্তের অবস্থিত এই ছোট্ট গ্রামের লৌকিক দেবী আরাধনা আর গ্রামীণ মেলা বেশ জমজমাট ..
হুগলী দর্শন
Friday, 9 August 2019
।। চুপিসাড়ে ইতিহাসের গল্প বলা মন্দিরটা ।।
( মানকুন্ডুর দশভূজা মন্দির )
একটা ব্যাস্ত শহরের ব্যস্ততা মোড়া রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা একটা মন্দির । আশেপাশের মানুষজন রোজই সেটা দেখে , কিন্তু ওইটুকুই। তার সাথে যে ইতিহাস অনেক কিছু জড়িয়ে আছে তা বোধহয় চোখ এড়িয়ে যাচ্ছে আপনি হয়তো জানেন না ।আপনার বাড়ির পাশের মন্দিরের সাথে মোঘল আমল এর ইতিহাস জড়িয়ে ।
হ্যাঁ ,ঠিক এমনটাই হয়েছে, আজ সেই গল্প।জেলার ব্যাস্ততম শহর মানকুন্ডু । মানকুন্ডু শহর টা একটু অস্তিত্ব হীনতায় ভোগে ,কারণ চন্দননগর শহর টা এই শহররের নাম টা প্রায় গিলেফেলেছে ।এই শহরের অস্তিত্ব জানান দেয় তার রেল স্টেশন টা । সে যাইহোক , এই মানকুন্ডুর এক মন্দিরের গল্প । সাধারণত তথ্য ভিত্তিক লেখা হয় তবে আজ স্বাদ বদল । কলকাতার দিক থেকে জিটিরোড ধরে আসছেন চন্দননগর গেট পাড় হয়ে বাঁদিকের রাস্তা দিয়ে কিছুটা গেলেই দশভূজা তলা আর ডান দিকে কিছুটা গেলেই আপাত বৈচিত্র হীন একচালা মন্দির দশভুজা ।আজ এই মন্দিরের গল্প ।একঝলক দেখলে এই মন্দির কে চোখে লাগবে না, আর মন্দিরের সামনের নাট মন্দির ,মন্দির টাকে ঢেকে ফেলেছে ।তবে এই চালা মন্দির এর গায়ে টেরাকোটা র কাজ ছিল ।
কিন্তু গায়ে প্রলেপের লাল রঙ আর রক্ষণাবেক্ষণ এর অভাবে সে কাজ নষ্ট হয়ে গেছে ।ত্রিখিলান বিশিষ্ট দরজা চোখ টানে। ভিতরে অষ্টধাতুর এক ফুটের দশভুজা মুর্তি ,আর রাধা কৃষ্ণ মূর্তি ।মন্দিরের পাশে দূর্গা মন্দির সেখানে দূর্গা পুজা হয় ।এটাই সবচেয়ে বড় উৎসব এই মন্দিরের ।এ তো সব মন্দিরের গল্প , কিন্তু এই দশভুজা মন্দিরের একটা ইতিহাস আছে আর আছে একটা গল্প সেটাই মন ছুঁয়ে যায় ।
সেই গল্পে আসার আগে , প্রাসঙ্গিক কিছু কথা -- দশভুজা মন্দির দিনের বেশী সময় বন্ধ থাকে সকালে ও সন্ধ্যে তে মন্দিরের পাশের দিকের দরজা খুলে পুজো হয় ।এই মন্দির প্রাঙ্গণে দেখা হয় অনু দিদি র সাথে তিনি সব ব্যবস্থা করেন এবং মন্দির যাদের তাদের সাথেও আলাপ করিয়ে দেন । আর এই আলাপ পর্ব ই গল্পের জন্ম দেয় ।
মানকুন্ডুর দশভুজা মন্দির বর্তমানে স্থানীয় মজুমদার বংশ দেখভাল করে । আলাপ হল এই বংশের বর্ষীয়ান সদস্য শ্রী পঞ্চানন মজুমদার এর সাথে। কথায় কথায় তিনি একটা ডায়েরি দেখালেন , ডায়েরি টির বয়স সত্তর ছুঁই ছুঁই ।পঞ্চানন বাবুর বাবার লেখা এই ডায়েরি পড়ে জানা যায় এই মন্দির মোঘল আমালের । রাজা মানসিং বাংলায় এসেছিলেন এবং শিবির করেছিলেন তৎকালীন শ্যামবাটি গ্রামে ।এই শ্যামবাটি পরবর্তী তে মানকুন্ডু । রাজা মানসিং এর ঘোড়া হারিয়ে গেলে স্থানীয় যুবক রাম রাম ঘোষ সেই ঘোড়া খুজেঁ আনেন। মান সিং খুশী হয়ে তাকে মোঘল দরবারের কাজে বহাল করেন । পরবর্তীতে রামরাম এর কাজে খুশি হয়ে তাকে শ্যামবাটি অঞ্চলের জায়গীরদার করা হয় এবং মজুমদার উপাধি দেওয়া হয় ।এই রামরাম মজুমদার এই এই দশভুজা মন্দিরের স্থাপনা করেন ।এই মন্দিরের বয়স আনুমানিক চারশো বছরের বেশী ।এতো গেল ইতিহাস এর কথা এই মন্দিরের একটি লৌকিক গল্প ও রয়েছে ,সেই ডায়েরি পড়ে তাও জানা যায় । আর সেই গল্প আরও আকর্ষণীয় ।
( দশভূজার বিগ্রহ )
এই গল্প এক ডাকাতের গল্প । ডায়েরি অনুযায়ী এক ডাকাত দল এক ব্রাহ্মণের বাড়িতে অন্ন গ্রহণ করে এত প্রসন্ন হয় যে তারা তাদের ডাকাতির একটা অংশ ব্রাহ্মণ কে দিতে চায় । সেই ডাকাত দলের ডাকাতি সামগ্রীর মধ্যে ছিল এই দশভূজা মূর্তি টিও।। তারা লুঠ করার সময় বাড়ির কূলদেবীকেও লুঠ করে আনে .. তো ব্রাহ্মণ সেই দেবী মূর্তি পরম যত্নে ও ভক্তি ভরে স্থাপন ও পুজা শুরু করে । কিন্তু দেবী তাকে স্বপ্ন দেয় যে তিনি ব্রাহ্মণের ঘরে অন্নভোগ গ্রহণ করবেন না তাকে যেন মজুমদার দের বাড়িতে দিয়ে আসা হয় । ঠিক একরকম স্বপ্নদেশ পান জমিদার রামরাম মজুমদার এবং ব্রাহ্মণ অষ্টধাতুর মাতৃ মূর্তি জমিদার কে দিয়ে আসেন।। তারপর স্থাপিত হয় এই দশভুজা মন্দির ।
( প্রাচীন রাধাকৃষ্ণ বিগ্রহ )
তবে সেই ট্রাডিশান আজও চলছে ,শূদ্রের ঘরে পুজীত দেবীর নিত্যপুজা হলেও অন্নভোগ হয়না ।
তবে ডাকাত দলের কাহিনী গল্প কথা হতে পারে কিন্তু ১৯৬৮ সালে এই মন্দিরের বিগ্রহ সত্যিই চুরি গিয়েছিল , সেই সময়কার সংবাদ পত্রে সে খবর ছাপা ও হয় । চন্দননগর এর লাল দিঘী থেকে সেটি উদ্ধার করা হয় ।
প্রায় চার শতাব্দী ধরে স্বমহিমায় বিরাজ করছেন দেবী দশভুজা এই মানকুন্ডু অঞ্চলে আপাত বৈচিত্র্য হীন হয়ে । হয়ত বিগ্রহ থেকে যাবে , কিন্তু কালের গহ্বরে হারিয়ে যাবে এই মন্দির আর ইতিহাস ।।
( ছবি ও লেখনি - সুমন্ত বড়াল )
হুগলী দর্শন
ভক্তের সাথে পথেই বিরাজ করেন " পথের মা "
ভক্তের সাথে পথেই বিরাজ করেন " পথের মা " গুগুল ম্যাপ পিচ রাস্তা থেকে ঢালাই রাস্তা পেরিয়ে বাড়ির উঠান দিয়ে যে মোড়ে নিয়ে ...
-
সাজি বাড়ির ঠাকুর দালানে শক্তির আরাধনা পুজো পরিক্রমা ব্যাপার টা বেশ মজার, তবে এ পরিক্রমা প্যান্ডেলে ঘুরে ঠাকুর দেখ...